বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৪:১৪ অপরাহ্ন

তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

অনলাইন ডেস্ক: উজানের পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের বর্ষণে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে লালমনিরহাটের তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার।

শনিবার (২০ জুন) সকাল ৯টার দিকে দেশের বৃহত্তম সেচপ্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৭৮ সেন্টিমিটর। যা (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটর) বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এর আগে শুক্রবার (১৯ জুন) রাতে হঠাৎ বাড়তে থাকে তিস্তার পানি প্রবাহ। যা ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে শনিবার সকাল ৬টার দিকে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও ৩ ঘণ্টা পর কিছুটা কমে সকাল ৯টার দিকে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, উজানের পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তিস্তার পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে শুকিয়ে যাওয়া মৃত প্রায় তিস্তা নদী আবারও ফুলে ফেঁপে ফিরে পেয়েছে চিরচেনা রূপ। হেঁটে পাড়ি দেওয়া তিস্তায় চলতে শুরু করেছে নৌকা। হাঁকডাক বেড়েছে মাঝি মাল্লাদের। কর্মব্যস্থতা দেখা দিয়েছে তিস্তাপাড়ের জেলে পরিবারে।

অপরদিকে, পানি প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় তিস্তার তীরবর্তী জেলার পাঁচটি উপজেলার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা, ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

এদিকে হঠাৎ পানি বৃদ্ধি দেখে তিস্তাপাড়ের মানুষ বড় ধরনের বন্যার শঙ্কায়। তবে বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দাবি তিস্তায় বড় ধরনের বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই। বৃষ্টির কারণে উজানের ঢেউয়ের ফলে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। উজানে ভারতে পানি প্রবাহ কমে যাচ্ছে। তাই ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ কমে যাবে বলে দাবি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ডালিয়া শাখা। পলি ও বালু জমে তিস্তা ভরাট হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই পানি প্রবাহ লোকালয়ে প্রবাহিত হয়ে বন্যা দেখা দেয়। তবে আতঙ্কিত না হতে পরামর্শ বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের।

তিস্তায় পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় সৃষ্ট বন্যায় চরাঞ্চলের সবজি, বাদাম ও ভুট্টাসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। অনেকের ফসলের ক্ষেত বন্যার পানিতে ডুবে গিয়ে ফসলহানির শঙ্কায় কৃষকরা। তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দি পরিবারগুলো শিশু বৃদ্ধ ও গবাদি পশুপাখি নিয়ে পড়েছেন বিপাকে।

আদিতমারী উপজেলার গোবর্দ্ধন পাসাইটারী তিস্তা চরাঞ্চলের কৃষক আজিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, শুক্রবার রাতে হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পেয়ে পানিবন্দি হওয়ায় বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।

হাতীবান্ধা উপজেলার পাটিকাপাড়া ইউনিয়নের চর হলদিবাড়ী গ্রামের আব্দুর রহমান   বলেন, গত দু’দিন থেকে একটু একটু করে বৃদ্ধি পেয়ে আবার কমে গেলেও শুক্রবার রাতে প্রচণ্ড গতিতে পানি প্রবাহ বেড়ে যায়। ফলে পানিবন্দি হয়ে গ্রামের সবাই পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম বিপাকের মধ্যে পড়েছি।

হাতীবান্ধা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ফেরদৌস আলম   বলেন, এ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন তিস্তার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পানিবন্দি পরিবারগুলোর তালিকা করতে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদকে বলা হয়েছে। তালিকা পেলে বরাদ্দ নিয়ে ত্রাণ বিতরণ শুরু করা হবে।

দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম   বলেন, উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি প্রবাহ শুক্রবার রাতে থেকে বাড়তে থাকে। শনিবার সকালে ৬টার দিকে পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পরে সকাল ৯টায় কমে গিয়ে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্যারাজ রক্ষার্থে সবগুলো জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে ভারতে পানি প্রবাহ কমে গেছে। ফলে শনিবার বিকেলের মধ্যে তিস্তার পানি প্রবাহও কমে যেতে পারে বলে আশা রাখছি।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335