বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১০:৩৯ অপরাহ্ন

করোনা–কাল

জিটিবি নিউজঃ সকালে ঘুম থেকে উঠে অভ্যাসবশত উত্তরের ঝুলবারান্দায় এসে দাঁড়াতেই চোখ পড়ল রাস্তার ওপারে কৃষ্ণচূড়া গাছটির দিকে। কদিন থেকে খেয়াল করছিলাম গাছটিতে নতুন পাতা বেরোচ্ছে। আজ দেখি পাতাগুলো ঘন হয়ে গাঢ় সবুজ রং ধারণ করেছে, তাতে আবার চূড়ায় বেশ কটি ফুলও ফুটেছে। টকটকে লাল ফুল। ঠিক যেন লাল–সবুজ পতাকা। মনটা আনন্দে গেয়ে উঠল—আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।

ফুল তো প্রতিবছরই চোখে পড়ে, কিন্তু আজ এত সুন্দর কেন মনে হচ্ছে? সঙ্গে সঙ্গেই মনে এল—আরে, এ তো করোনা–কাল। এখন তো প্রকৃতির আনন্দের শেষ নেই। বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, জলদূষণ সবই ভীষণ কমেছে। তাই গাছ, পশু, পাখি সবাই মেতেছে আনন্দে। আমার এই ক্ষুদ্র ঝুলবারান্দায় প্রতিদিন যত পাখির আনাগোনা দেখছি আর তাদের কলকাকলি শুনছি, সত্যিই অভূতপূর্ব! ওদের রাজত্ব আমরা জবরদখল করেছিলাম—তা থেকে ওরা মুক্তি পেয়েছে আজ যেন!

বুক ভরে কয়েকবার নিশ্বাস নিলাম। আমিও ভোগ করি না কেন এই স্বচ্ছ নির্মল বাতাস! আহ্! একটা তৃপ্তির আওয়াজ নিজ থেকেই নির্গত হলো কণ্ঠ থেকে। ওই দেখুন, ওই যে দূরে মোড়টায় এক মুরগি বিক্রেতা ‘মু–র–গি’ বলে হাঁক দিল। কী আশ্চর্য, অত দূর থেকে কী পরিষ্কার আওয়াজটা ভেসে এল আমার কাছে অব্দি। হ্যাঁ, শব্দদূষণ না থাকলে এমনই হবে। আমাদের আর চেঁচাতে হবে না। ইশ্, আমার বুড়িগঙ্গার পানিটা একটু দেখতে ইচ্ছা হচ্ছে এখন। ওর কি রূপ বদলেছে? এই এক মাসে কি ও পুরোনো রূপ কিছুটা হলেও ফিরে পেয়েছে? ওখানে কি পানকৌড়ি এসে ডুবসাঁতার খেলায় মেতেছে? আহ্! কী আনন্দ!!

নাহ্! কল্পনার আনন্দটা বোধ হয় বেশি হয়ে যাচ্ছে। এ মুহূর্তে মনে পড়ে গেল টিভি পর্দায় দেখা একটি দৃশ্য। হাজার হাজার লোকের উপস্থিতিতে একটি জানাজা অনুষ্ঠান। সারা দেশের মানুষ আতঙ্কে হতবাক এ দৃশ্যে। মৃত ব্যক্তির প্রতি অন্য কোনোভাবে এ শ্রদ্ধাটা কি জানানো যেত না? কী জানি। অনেক কিছুই হয়তো বুঝি না আমি। তবে এটুকু বুঝতে অসুবিধা হয় না যে এখনো দেশের অনেক মানুষ নিজেদের বিপদটা বুঝতে পারছেন না।

রাস্তায় লোক চলাচল দেখি শুরু হয়ে গেছে। দু–তিনটি সবজির ভ্যান এসে খুঁটি গেড়েছে। তাকে ঘিরে চলছে কেনাকাটার পালা। হ্যাঁ, এটারও প্রয়োজন তো আছে। তবে এরা চেষ্টা করছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে, এ দৃশ্য স্বস্তিদায়ক।

চায়ের টেবিল থেকে ডাক এল শিরীনের। চা টোস্ট বিস্কিট রেডি, সঙ্গে ওষুধ, পানি। মুঠোফোনে প্রথম আলো পড়তে গিয়ে দেখলাম, সেখানে অপেক্ষা করছিল একটি দুঃসংবাদ। অভিনয়শিল্পী ফেরদৌসী আহমেদ লীনা অন্যলোকে প্রস্থান করেছেন। মনে পড়ে গেল আমার নির্দেশনায় রবিঠাকুরের সুভা নাটকে তাঁর অভিনয়। সুভার মায়ের চরিত্রে খুবই সহজ, স্বাভাবিক ও সুন্দর অভিনয় করেছিলেন। অত্যন্ত অমায়িক, সদাহাস্যময়ী, মিশুক স্বভাবের মানুষ ছিলেন ফেরদৌসী। আল্লাহ যেন তাঁকে বেহেশত নসিব করেন।

চা–পান করে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটির পর বসলাম পড়ার টেবিলে। প্রায় মাসখানেক ঘরবন্দী। সময় কাটানো সত্যি সমস্যা। মুঠোফোন, টিভি আর বই—এই তো মাধ্যম সময় কাটানোর। বই পড়ি, খবর দেখি বিভিন্ন টিভি চ্যানেল, মাঝেমধ্যে সিনেমা, নাটকও দেখা হয়। ইউটিউবে গান শোনাটাও বেশ স্বস্তিদায়ক। লেখালেখিরও চেষ্টা যে করি না তা নয়। আসলে অস্থিরতা কাটানোটাই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। বেশি অস্থির লাগলে শিরীন ও আমি পরিস্থিতি আলোচনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ি। মেয়েজামাই, নাতি–নাতনি আর কাছের মানুষের সঙ্গে ফোনে কথা বলাও একটা পন্থা মনের অস্থিরতা কাটানোর। বাগান পরিচর্যাটাও মাঝেমধ্যে চেষ্টা করি। তবে ওটা মোটামুটি শিরীনের ডিপার্টমেন্ট।

বেশ কিছু বই পড়ার লিস্টে ঢুকেছে। উল্লেখযোগ্য সৈয়দ শামসুল হকের তিন পয়সার জ্যোছনা, আকবর আলি খানের দুর্ভাবনা ও ভাবনা: রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে, বিমল দত্তের চলতি ইসলামি শব্দকোষ, মালেকা বেগমের পুষ্পকুন্তলা, সন্‌জীদা খাতুনের শান্তিনিকেতনের দিনগুলি। তা ছাড়া রয়েছে এ বই সে বই ঘাঁটাঘাঁটি—যেমন ঋত্বিক ঘটকের গল্পসংগ্রহ, সোমন চন্দের রচনাবলি, নানা রকমের কৌতুকের বই। কবিতা খুব একটা পড়ি না। তারপরও রবিঠাকুরের স্ফুলিঙ্গ ঘাঁটাঘাঁটি করি প্রায়ই। ছোট ছোট কবিতাগুলো সত্যিই আগুনের কণার মতোই। মন কেড়ে নেওয়া কবিতা। এর একটা কবিতা এখন মনে পড়ছে—

সবচেয়ে ভক্তি যার অস্ত্রদেবতারে

অস্ত্র যত জয়ী হয় আপনি সে হারে।।

এই কবিতা পড়ে এক পরাক্রমশালী ব্যক্তির চেহারাটা ভেসে উঠেছে আমার চোখে, যাঁর নাম ডোনাল্ড ট্রাম্প।

আসুন, আমরা থাকি ঘরে, করোনা যাক দূরে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335