বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৭:৫৬ অপরাহ্ন

মমতা সরকারের মন্ত্রীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা একনজরে

জিটিবি নিউজ টুয়েন্টিফোর : পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সামগ্রিকভাবে তার মন্ত্রিসভা এবং প্রতিমন্ত্রীরা রাজ্য প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের দায়িত্ব সামলান। আর এই দায়িত্ব পালনের প্রেক্ষিতে মন্ত্রী তথা রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের কাজকর্ম-যোগ্যতা কখনও প্রশংসিত হয়, আবার বিভিন্ন সময়ে প্রশ্নের মুখেও পড়ে। কিন্তু, তাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগত যোগ্যতা বহু ক্ষেত্রেই অজানা থাকে সাধারণ নাগরিকের।

একনজরে দেখা নেওয়া যাক মমতা সরকারের মন্ত্রীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সব তথ্যই ভারতের নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া নথি থেকে সংগৃহীত।

অমিত মিত্র : রাজ্যের ‘অর্থভাণ্ডার’ এবং শিল্পমানচিত্রের দায়িত্ব যাঁর হাতে, তিনি অমিত মিত্র। তৎকালীন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক স্তরের শিক্ষা সম্পূর্ণ করে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর পাস করেন খড়দার বিধায়ক। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি করেন তিনি। ডক্টরেট ডিগ্রিপ্রাপ্ত অমিত মিত্রের হাতেই পশ্চিমবঙ্গের অর্থ ও শিল্প দফতরের দায়িত্ব দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

পার্থ চট্টপাধ্যায় : রাজ্যের শিক্ষা ও পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ১৯৭৩ সালে আশুতোষ কলেজ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক হওয়ার পর ১৯৮১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ এবং ১৯৮২ সালে আইনে স্নাতক হন তৃণমূলের মহাসচিব। এরপর ১৯৮৭ সালে লন্ডন থেকে পিএমআইআরও পাশ করার পর, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ডক্টরেটও করেছেন রাজ্যের প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী।

সুব্রত মুখোপাধ্যায় : রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। কলকাতার বিখ্যাত দুর্গাপুজো একডালিয়া এভারগ্রিনের প্রধান উদ্যোক্তা তথা বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক ১৯৭০ সালে আর্কিওলজিতে স্নাতকোত্তরের পর ১৯৭১ সালে প্রাচীন ইতিহাসও স্নাতকোত্তর পাশ করেন।

শোভনদেব চট্টপাধ্যায় : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুরানো সাথী তথা বিদ্যুত্ৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ১৯৭১ সালে আশুতোষ কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক হন। পরবর্তীকালে হাজরা ল’ কলেজ থেকে আইনেও স্নাতক হন তিনি।

শুভেন্দু অধিকারী : তৃণমূল কংগ্রেস নেতা তথা ‘নন্দীগ্রামের নায়ক’ শুভেন্দু অধিকারী বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিবহন মন্ত্রী। শিশির-পুত্রের শিক্ষাগত যোগ্যতা- স্নাতকোত্তর।

গৌতম দেব : তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে দলে রয়েছেন অধুনা রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি শিলিগুড়ি বয়েজ উচ্চবিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে সুরেন্দ্রনাথ ল’কলেজ থেকে আইনেও স্নাতক হন গৌতম দেব।

ব্রাত্যব্রত বসু : ২০১১ সালে প্রথমবারের জন্য রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর তিনিই ছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী। নাট্যকার, নাট্য পরিচালক, অভিনেতা তথা রাজনীতিবিদ ব্রাত্য বসু ১৯৯২ সালে বাংলায় স্নাতকোত্তর পাশ করেন। বর্তমানে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও জৈবপ্রযুক্তি দফতরের ভার সামলাচ্ছেন ব্রাত্য।

সুজিত বসু : বিধাননগর অঞ্চলের হেভিওয়েট নেতাদের মধ্যে অন্যতম সুজিত বসু। শ্রীভূমি স্পোর্টিংয়ের মতো বড় পুজোর উদ্যোক্তাও তিনি। একাদশ শ্রেণি পাশ বিধাননগরের বিধায়ক বর্তমানে সামলান রাজ্যের দমকল দফতর।

আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা : একদা সিপিএমের প্রথম সারির নেতা ছিলেন আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা। ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পরই তৃণমূলে যোগ দেন এই নেতা। বর্তমানে রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তিনি। বাম আমলে রাজ্যের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের মন্ত্রী ১৯৬৩ সালে মণীন্দ্র চন্দ্র কলেজ থেকে পি.ইউ পাস করার পর ১৯৬৮ সালে কলাবিভাগে স্নাতক হন।

জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক : মমতা শিবিরের অন্যতম নির্ভরযোগ্য নাম জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। বর্তমানে খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় ১৯৭৯ সালে বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে বি.এসসি পাশ করে ১৯৮৩ সালে সুরেন্দ্রনাথ ল’কলেজ থেকে আইনে স্নাতক হন।

ফিরহাদ হাকিম : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত বিশ্বস্ত সৈনিক ফিরহাদ হাকিমের হাতেই পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের দায়িত্ব। কলকাতার মহানাগরিক ১৯৭৯ সালে হেরম্ব চন্দ্র কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে স্নাতক হন।

অরূপ বিশ্বাস : রাজ্যের পূর্ত বিভাগ এবং যুবকল্যাণ দফতরের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব যাঁর হাতে, তিনি টালিগঞ্জের বিধায়ক এবং টলিপাড়ার ‘কাছের মানুষ’ অরূপ বিশ্বাস। ১৯৮৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্যে স্নাতক সম্পূর্ণ করেন অরূপ।

জাভেদ খান আহমেদ : ১৯৭৮-৭৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্যে স্নাতক জাভেদ খান আহমেদ বর্তমানে এ রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রী। সম্প্রতি বুলবুলকাণ্ডে তাঁর দফতরের কাজের ভূয়সী প্রশংসাও করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মলয় ঘটক : আসানসোল উত্তর-এর বিধায়ক মলয় ঘটকের হাতে শ্রম ও আইন-বিচারবিভাগীয় দফতরের দায়িত্ব দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৭৬ সালে রাঁচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক হয়েছেন মলয়। এরপর ১৯৮২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি-ও পাশ করেছেন তিনি।

ড. আশীষ বন্দোপাধ্যায় : রামপুরহাটের বিধায়ক ড: আশীষ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৭০ সালে রামপুরহাট কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক হওয়ার পর ১৯৭২ সালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষে করেন এবং ১৯৮৫ সালে পিএইচডি সম্পূর্ন করেন।

অরূপ রায় : রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.কম ও বি.এ পাশ করেন। এছাড়া, আইনেও স্নাতক হয়েছেন তিনি।

রাজীব বন্ধোপাধ্যায় : বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৮৮ সালে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে স্নাতক (সাম্মানিক) হন এবং ১৯৯৫ সালে আইআইএমই থেকে এমবিএ পাশ করেন।

চন্দ্রনাথ সিনহা : মৎস্য মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা গণিতে স্নাতোকত্তর। এছাড়া, স্পোর্টস সায়েন্সে ডিপ্লোমাও করেছেন তিনি।

তপন দাশগুপ্ত : রাজ্যের কৃষি ও বিপনন মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়েছেন।

সৌমেন কুমার মহাপাত্র : শিক্ষাগত যোগ্যতার দিক থেকে একের পর এক সার্টিফিকেট রয়েছে যাঁর ঝুলিতে, তিনি পিংলার বিধায়ক সৌমেন কুমার মহাপাত্র। ১৯৭৬-তে বি.এসসি, ১৯৮০ সালে এম.এসসি, ১৯৮৮-তে পিএইচডি এবং পরবর্তীতে লন্ডন থেকে এফআরইএস এবং ফিশারি, উচ্চ শিক্ষা বিষয়ক আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সৌমেন কুমার মহাপাত্র বর্তমানে রয়েছেন জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রীর পদে।

বিনয়কৃষ্ণ বর্মন : সম্প্রতি মমতার মন্ত্রিসভায় এসেছেন মাথাভাঙা বিধানসভার বিধায়ক বিনয়কৃষ্ণ বর্মন। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮২ সালে বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক এবং ১৯৮৪ সালে বি.এড করা এই মন্ত্রী বর্তমানে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের দায়িত্ব পেয়েছেন।

রবীন্দ্রনাথ ঘোষ : উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রকের দায়িত্বে রয়েছেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।

সাধন পাণ্ডে : ১৯৬৭ সালে কলকাতা বয়েজ স্কুল থেকে সিনিয়র কেমব্রিজ, ১৯৭১ সালে বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে স্নাতক এবং ১৯৭৬ সালে এলএলবি পাস করা মানিকতলার বিধায়ক সাধন পান্ডে বর্তমানে রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী।

শান্তিরাম মাহাতো : ১৯৭২ সালে স্কুল পাস করেছেন বলরামপুরের বিধায়ক শান্তিরাম মাহাতো। বর্তমানে রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরের দায়িত্বভার দেওয়া হয়েছে শান্তিরাম মাহাতোকে।

শশী পাঁজা : প্রখ্যাত রাজনীতিক অজিত পাঁজার পুত্রবধূ শশী পাঁজা কলকাতার রাধাগোবিন্দ কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস করেন। পরবর্তীতে ২০১১ সালে তিনি শ্যামপুকুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নারী ও শিশুকল্যাণ বিভাগের রাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০১৪ সালের মে মাসে তাঁকে সমাজকল্যাণ বিভাগের অতিরিক্ত দায়িত্বও দেওয়া হয়।

সিদ্দিকুল্লা চৌধুরি : উত্তরপ্রদেশের দেওবন্দের মাদ্রাসা দারুল উলুম থেকে ফাজিল (fazil) ডিগ্রিপ্রাপ্ত সিদ্দিকুল্লা চৌধুরি বর্তমানে রয়েছেন রাজ্যের জনশিক্ষা ও গ্রন্থাগার মন্ত্রী পদে।

অসীমা পাত্র : ২০১১ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় ধনেখালি বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ১৯৮৮ সালে উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ ধনেখালির বিধায়ক অসীমা পাত্র। বর্তমানে পরিকল্পনা দফতরের পাশাপাশি কৃষি ও মত্‍স্য দফতরের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও সামলাচ্ছেন তিনি।

মন্টুরাম পাখিরা : বুলবুল বিপর্যয়ে মানুষের পাশে থাকতে রাত জেগেছিলেন স্কুল পাস মন্টুরাম পাখিরা। পরবর্তীতে সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী মন্টুরামের প্রশংসা শোনা যায় মুখ্যমন্ত্রীর গলাতেও।

স্বপন দেবনাথ : রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প ধফতরের প্রতিমন্ত্রী স্বপন দেবনাথের শিক্ষাগত যোগ্যতা এলএলবি, এম.কম।

মমতা বন্ধোপাধ্যায় : পথে নেমে রাজনীতি করা দীর্ঘকালের বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিগত আট বছর রাজ্যে ক্ষমতার শীর্ষে। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে উত্থান-পতনের পাশাপাশি একাধিক বার তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রসঙ্গেও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নানা তীর্যক উক্তি বারবার সামনে এসেছে। তবে, ভারতের নির্বাচন কমিশনের নথি বলছে, কলকাতার যোগমায়া দেবী কলেজ থেকে স্নাতকের পাঠ শেষ করে শ্রী শিক্ষায়তন কলেজ থেকে তিনি কর্মশিক্ষায় বি.এড ডিগ্রি লাভ করেছেন। এছাড়া, যোগেশ চন্দ্র কলেজ থেকে এলএলবি পাশ করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতোকত্তরও সম্পূর্ণ করেছেন মমতা।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335