বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৯:২২ অপরাহ্ন

জয়ের পথে রয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী

 জিটিবি নিউজ:  গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জয়ের পথে রয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী (নৌকা) জাহাঙ্গীর আলম।তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির দলীয় প্রার্থীর চেয়ে বিপুল ভোটে এগিয়ে রয়েছেন তিনি। মোট ৪২৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ১৮১টি কেন্দ্রের ফলাফর পাওয়া গেছে।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম নৌকা প্রতীক নিয়ে ২০৭৫১৮ ভোট পেয়ে এগিয়ে আছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৯০৬০০ ভোট।

এর আগে, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার (২৬জুন) বিকেল ৪টায় ভোট দেওয়া শেষে শুরু হয়েছে গণনা। নির্বাচন চলাকালীন বিএনপি অভিযোগ করেছে, দুই শতাধিক কেন্দ্র থেকে তাদের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে একে বিএনপির ‘চিরাচরিত অভ্যাস’ বলে মন্তব্য করেছে আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন থেকে দুপুরে জানানো হয়েছে, সব শেষ অনিয়মের অভিযোগে সাতটি ভোটকেন্দ্র স্থগিত করা হয়েছে। আর একটি কেন্দ্রে আধা ঘণ্টার জন্য ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছিল।

এদিকে, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, গাজীপুরে যে খবর পেয়েছি তা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার। আমরা চমৎকার নির্বাচন চাইনি। সুষ্ঠু নির্বাচন চেয়েছি। কিন্তু নির্বাচন কমিশন বারবার সরকারের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে নির্বাচন আয়োজন করেছে। যা সম্পূর্ণ জালিয়াতি ও ভোট ডাকাতির।

তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম নানক বলেন, গাজীপুর সিটিতে আজকের নির্বাচনে বিভিন্ন কেন্দ্রে দুই কারণে বিএনপি কোনো এজেন্ট দেয়নি। প্রথমত, প্রার্থীর দুর্বলতা। দ্বিতীয়ত, দলীয় কোন্দল। তারা দলীয় দৈন্যতায় ভুগছে। তাই নানা অভিযোগ করে উধোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে তারা।

এদিকে, অতীতের যেকোনও সময়য়ের তুলনায় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন এ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিবউদ্দীন মণ্ডল। বিকেলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, গাজীপুর সিটিতে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হয়েছে। এটিকে মডেল নির্বাচন হিসেবে আমি উল্লেখ করতে চাই। ভোটের ফল যা-ই হোক তা মেনে নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান তিনি।

রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, নির্বাচন চলাকালে ৯টি ভোট কেন্দ্রে বিভিন্ন অভিযোগে ভোট স্থগিত করা হয়েছে। এ নির্বাচনে ৫৫-৬০ শতাংশ ভোট পড়েছে। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বড় কোনও সহিংসতার খবর পাওয়া না গেলেও অনেক কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের এজেন্ট বের করে দেওয়ার অভিযোগ করে ভোট বন্ধের দাবি জানান বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার।

২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক এমএ মান্নান বিপুল ভোটের ব্যবধানে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে এবার তাকে মনোনয়ন না দিয়ে হাসান উদ্দিন সরকারকে প্রার্থী করেছে দলটি। অন্যদিকে গতবার নির্বাচনে অধ্যাপক এমএ মান্নানের কাছে পরাজিত আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহকে বাদ দিয়ে মনোনয়ন দিয়েছে মো. জাহাঙ্গীর আলমকে। নির্বাচনে ৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূল লড়াই হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত দুই প্রার্থীর মধ্যেই। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, জাতীয় সংসদের গাজীপুর-১, ২ ও ৩ আসনের কিছু কিছু অংশ নিয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকা গঠিত। সিটি কর্পোরেশনের মোট ওয়ার্ড ৫৭টি।

এর মধ্যে ৩৫টি ওয়ার্ড পড়েছে গাজীপুর-২ আসনে। ১৮টি ওয়ার্ড আছে গাজীপুর-১ আসনের মধ্যে। আর গাজীপুর-৩ আসনে রয়েছে চারটি ওয়ার্ড। ৭ লাখ ৪৩ হাজারের বেশি ভোট গাজীপুর-২ আসনের ৩৫ ওয়ার্ডে। গাজীপুর-২ আসনের ১৮টি ওয়ার্ডে আছে ৩ লাখ ২৩ হাজারের বেশি ভোট। আর গাজীপুর-৩ আসনের চার ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ৬০ হাজার ৮৮৬। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে সিটি কর্পোরেশনভুক্ত ৩টি আসনের ভোটের হিসাব-নিকাশে এগিয়ে রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে, ২০১৩ সালের প্রথম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক এমএ মান্নান লক্ষাধিক ভোটে আওয়ামী লীগের আজমতউল্লা খানকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন। মান্নান পান ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৪৪৪ ভোট।

আর আজমতউল্লা খান পান ২ লাখ ৫৮ হাজার ৮৬৮ ভোট। ওই নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১০ লাখ ২৬ হাজার। এবার এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জনে। অর্থাৎ এক লাখেরও বেশি নতুন ভোটার ভোট দিবেন এবারের নির্বাচনে। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ সালের (যেহেতু ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি) নির্বাচনের ভোটের হিসাব-নিকাশে সিটি কর্পোরেশনভুক্ত গাজীপুর-১,২ ও ৩ আসনে আওয়ামী লীগ এগিয়ে রয়েছে। তিনটি আসনই দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির প্রার্থীদের হাতছাড়া। গাজীপুর-১- আসনে বিএনপি ১৯৯১ সাল থেকে একবারও জিততে পারেনি। সেখানে ১৯৯১ থেকে ২০০১ সালের তিনটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রহমত আলী বিজয়ী হয়েছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আসনের পুনর্বিন্যাসে গাজীপুর-১ আসনে নির্বাচন করে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের আ ক ম মোজাম্মেল হক (মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী)। গাজীপুর-২ আসনে বিএনপির হয়ে ১৯৯১ সালে একবারই জিতেছিলেন অধ্যাপক এমএ মান্নান।

তারপর থেকেই ওই আসনে জয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগ। সিটি কর্পোরেশনের সবচেয়ে বেশি ভোটার আছে এই আসনে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, এই আসনের ভোটের হিসাব-নিকাশ অনেকটা জটিল। এখানে নির্বাচন কখনো দ্বিমুখী, কখনো ত্রিমুখী এমনকি চতুর্মুুখী হয়েছে। ১৯৯১ সালে এ আসনে পরাজিত হন গাজীপুর-১-এর সাংসদ আকম মোজাম্মেল হক। ১৯৯৬ সালে গাজীপুর-২ আসনে জয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রয়াত আহসান উল্লাহ মাস্টার। নির্বাচনে দ্বিতীয় হন বিএনপির এমএ মান্নান। এই নির্বাচনে তৃতীয় হন তৎকালীন জাতীয় পার্টির নেতা ও বর্তমান গাজীপুর জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি সালাউদ্দিন সরকার। ১৯৯৯ সালে জাতীয় পার্টি ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন হাসান সরকার। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির হয়ে নির্বাচনে দাঁড়ান।

তবে দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে দ্বিতীয় হন এমএ মান্নান। তৃতীয় হন বিএনপির হাসান সরকার। এ নির্বাচনে অংশ নিয়ে চতুর্থ হন জাতীয় পার্টির প্রার্থী। ২০০১ সাল পর্যন্ত গাজীপুর-২-এ আওয়ামী লীগবিরোধী ভোটের এই ‘বিভাজন’ থাকলেও ২০০৮-এর নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হাসান সরকার হেরে যান প্রয়াত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে জাহিদ আহসান রাসেলের কাছে। সব মিলে গাজীপুর-২ আসনে ভোটের সমীকরণে এগিয়ে আওয়ামী লীগ। তবে ২০১৩ সালে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমতউল্লা খানকে পরাজিত করে বিএনপির অধ্যাপক এমএ মান্নান ভোটের সমীকরণ পাল্টে দেন

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335