শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৬:৩৯ অপরাহ্ন

গেরুয়া ভোটই চিন্তা তৃণমূলের

অনলাইন ডেস্কঃ উপ-নির্বাচনে বড় জয় পেয়েছে তৃণমূল। তবে ভোট বেড়েছে বিজেপিরও। আর তাতেই অস্বস্তিতে রাজ্যের শাসক শিবির। তাই সবংয়ে বিজয় সমাবেশের মঞ্চে দাঁড়িয়েও বিজেপির ভোটবৃদ্ধির কারণ ব্যাখ্যা করে গেলেন তৃণমূল নেতারা। আর সে ক্ষেত্রে উঠে এল, বামেদের ভোট গেরুয়া শিবিরে যাওয়ার তত্ত্বই।

রবিবার বছরের শেষ দিনে সবংয়ের উপ-নির্বাচনের বিজয় সমাবেশের আয়োজন করেছিল তৃণমূল। সবং হাইস্কুল ময়দানে আয়োজিত ওই সভায় মুখ্য বক্তা ছিলেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। জেলার প্রাক্তন পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের ইস্তফার পরে এ দিনের সভায় শুভেন্দু-সহ জেলার নেতারা কী বলেন, সে দিকেই নজর ছিল সকলের। মঞ্চে ছিলেন সবংয়ের নবনির্বাচিত বিধায়ক গীতা ভুঁইয়া, সাংসদ মানস ভুঁইয়া, তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি অজিত মাইতি, কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ, জেলা সভাধিপতি উত্তরা সিংহ প্রমুখ। খড়্গপুরের নেতারাও মঞ্চে ভিড় করেছিলেন। ছিলেন পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার, দেবাশিস চৌধুরী।

উপ-নির্বাচনের প্রচারে বারবার এসেছিলেন শুভেন্দু। গীতা ভুঁইয়াকে রেকর্ড ভোটে জয়ী করার পাশাপাশি বিজেপিকে তৃতীয়স্থানে পাঠানোর ডাক দিয়েছিলেন তিনি। ফল হয়েছে আশানুরূপ। তাই এ দিন বিজয় সমাবেশের মঞ্চে শুভেন্দু বলেন, “আমি দু’টি জিনিস চেয়েছিলাম। এক মানস ভুঁইয়ার রেকর্ড ভেঙে গীতা ভুঁইয়াকে জয়ী করুন। আর দুই বিজেপিকে তৃতীয়স্থানে পাঠিয়ে দিন। আমি কৃতজ্ঞ। আমার বিশেষ কিছু হয়তো দেওয়ার নেই। যদি কখনও কিছু করার সুযোগ থাকে সবংয়ের মানুষের জন্য করব।”

অবশ্য এ দিন সভামঞ্চেই সবংবাসীকে জোড়া উপহার দিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী। আগামী ৩০ জানুয়ারির আগেই সবং-কলকাতা রুটে যাতায়াতের জন্য দু’টি ডিলাক্স বাস চালুর কথা ঘোষণা করেন তিনি। গ্রীষ্মে বাস দু’টি বাতানুকূল করে দেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে সবংয়ে ৫টি যাত্রী প্রতীক্ষালয় ও বাজার আলোকিত করতে ১কোটি ২৩লক্ষ টাকা বরাদ্দের ঘোষণা করেন তিনি। আগামী মঙ্গলবার অফিস খুললে জেলাশাসক ওই টাকা পঞ্চায়েত সমিতিকে দিয়ে দেবেন বলে জানিয়ে গিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী। তার আগে শুভেন্দু সবংয়ের জয়ে বুথের কর্মীদের কৃতিত্বের কথা তুলে ধরে বলেছেন, “আমাদের সব বুথের কর্মীদের প্রথমে কৃতজ্ঞতা জানাই। নেতাদের নাম পরে বলব। আপনারা না থাকলে এই ফল কখনও হত না। শেষের ৪৮ ঘন্টা লড়েছেন আপনারা।” সঙ্গে তাঁর সংযোজন,  “আমি ও আমাদের পুরো দল খুব খুশি। ১৯৯৮ সালে দল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে সবংয়ের মানুষ এই প্রথমবার বিধানসভায় জোড়াফুলের প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন।”

তবে বিজেপির ভোটবৃদ্ধি নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব যে উদ্বেগে, এ দিনের বিজয় সমাবেশে তা চাপা থাকেনি। মানসবাবুকে বলতে শোনা যায়, “২০১৪ সাল সিপিএমের ৬৫ হাজার ভোট, ২০১৭ সাল সিপিএমের ৪১ হাজার ভোট— এই ভোটগুলি গেল কোথায়? বিজেপির চরণতলে পুষ্পাঞ্জলি দিলেন! লাল পতাকা গেরুয়া পতাকায় মিশে গিয়েছে।” একইসঙ্গে কর্মীদের উদ্দেশ্যে তাঁর বার্তা, “কর্মীদের বলছি বামপন্থীরা কর্মসূচি নিতে গেলে নিতে দিন। কিন্তু ওঁরা যদি গোপনে গেরুয়া শিবিরে গাঁটছড়া বাঁধে তবে চিহ্নিত করুন। শুভেন্দুবাবুকে জানান। আপনারা সচেতন থাকুন।” শুভেন্দুর প্রশংসা করে এবারের লড়াই যে কঠিন ছিল তা স্বীকার করেছেন মানস ভুঁইয়া। তিনি বলেন, “এই যুদ্ধ একটি ভয়ঙ্কর যুদ্ধ ছিল। শুভেন্দু আমাকে বলেছিল, আপনি অনেক দিনের লড়াই করা লোক। কিন্তু আপনাকে সাবধান করছি এই লড়াইকে হাল্কা করে দেখবেন না।” এমনকী বিজেপির ভোটবৃদ্ধি নিয়ে বুথওয়াড়ি মূল্যায়ন শুরু হয়েছে বলেও নেতা-কর্মীদের সতর্ক করেছেন তিনি। মানসবাবু বলেন, “৩০৬টি বুথ আমার হাতে এসেছে। দেভোগ থেকে মকরামিচক। আমি খুঁটিয়ে দেখছি। এই দলটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে চলছে। তিনি সব নজর রেখেছেন।”

শুভেন্দুও বিজেপিকে খোঁচা দেন।  মন্ত্রী বলেন, “পরিকল্পনা দিল্লি থেকে হল গুজরাত, হিমাচলের পরে সবংয়ে তৃণমূলকে ধাক্কা মারবে। ধাক্কা মারতে এসে নিজেরাই কুপোকাৎ হয়ে ঘরে ফিরে গিয়েছে।” তার পরে বিজেপির ভোটবৃদ্ধি নিয়ে বামেদের দায়ী করে শুভেন্দুর বক্তব্য, “তৃণমূলের ভোট কমেনি। মানসবাবু হিসেব দিয়েছেন বিজেপির ভোট কোত্থেকে এল। বামেরা রাম হয়েছে।” তবে এই ঘটনার পিছনে দলের লোকেদেরও সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দেননি শুভেন্দু। তিনি বলেন, “বিজেপি আরও নীচে নেমে যেত। কিন্তু সিপিএমের লোকেরা আর আমাদের একটি-দু’টি লোক এই কাণ্ড করেছে। মূল্যায়ন শুরু হয়ে গিয়েছে।” আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনেও সবংয়ের ঘরে ঘরে ঘাসফুল ফোটানোর ডাক দিয়েছেন শুভেন্দু।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335