শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৪৮ অপরাহ্ন

সাপ-বাঘের সঙ্গে সুখের সংসার আমতে পরিবারের

নাগপুর থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দূরে মহারাষ্ট্রে এক প্রত্যন্ত গ্রাম, নাম হেমলকাসা৷ এই ছোট্ট গ্রামেই রয়েছে এক যৌথ পরিবার৷ যার আকার বেশ বড়ই৷ এতোটাই বড় যে সেখানে থাকে ৯০জন সদস্য৷ তবে এই সংখ্যা কিন্তু থেমে থাকার নয়৷ বাচ্চাদের সংখ্যা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে৷ কিন্তু এই বৃহৎ পরিবারের সদস্য কারা জানেন? মাথাতেই বা কে রয়েছেন? এত্ত বড় পরিবারকে কারা সামলাচ্ছেন? কারা রয়েছেন ভরণপোষণের দায়িত্বে? প্রশ্ন গুচ্ছ৷ আর উত্তরের নাম? – ডঃ প্রকাশ এবং মন্দাকিনী আমতে৷

ডঃ প্রকাশ এবং মন্দাকিনী আমতে৷ ৫০ একর জমিতেই গড়ে উঠেছে আমতেজ অ্যানিমেল আর্ক৷ এই আর্ক হল গত ৪৫বছরে পশু পাখিদের স্থায়ী আস্তানা৷ ময়ূর, হরিণ, বাঘ, ভাল্লুক, কুমীর, হায়না কাকে চাই আপনার? ভয়ঙ্কর ভাল্লুক, হায়না যাকে দেখলে রক্ত জল হয়ে যাবে যে কোনও মানুষের, সেখানে আমতে পরিবার তার সঙ্গে খেলায় মত্ত৷ গৃহপালিত প্রাণীদের পাশাপাশি আমতে পরিবারের ভালোবাসা এবং স্নেহে বন্য পশুরাও যেন হয়ে উঠেছে এখানে বাড়িরই সদস্য, যেখানে প্রত্যেকেই সমান গুরুত্বপূর্ণ৷

আর সাপ? এ যেন জঙ্গল বুকের থ্রি-ডি ভার্সন৷ তবে বাস্তবে, একেবারে চোখের সামনে, জলজ্যান্ত৷ লম্বা, ছোট, মোটা, রোগা কত কিই না বাহার তাদের৷ কিন্তু কারও সঙ্গে কারও ঝগড়াঝাটি নেই এতটুকু৷ ফণা তুললেও, তার পিছনে এতটুকুও রাগ নেই৷ কারণ তারা যে ডঃ আমতের মন্ত্রে দীক্ষিত৷

কিন্তু এমন একটি মহৎ উদ্যোগ নেওয়ার পিছনে কোন তাগিদ ছিল?
প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে একটু যেতে হবে অতীতে৷ আসলে ডঃ প্রকাশ আমতের বাবা ছিলেন একজন সমাজসেবী, আর তার ইচ্ছা ছিল এই গ্রামের জন্য কিছু করে যাওয়ার৷ যে দরিদ্ররা কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত তাঁদের জন্য বাবা আমতে এবং তাঁর স্ত্রী সাধনা আমতে নিরন্তর সাহায্য করে গিয়েছেন৷ ১৯৫০-এ তাদের জন্য আনন্দন নামে একটি অরগানাইজেশন-ও খোলেন৷ পদ্ম বিভূষণ, গান্ধী পিস প্রাইজ, রামন ম্যাগসাইসাই অ্যাওয়ার্ড, টেম্পলটন প্রাইজ, জামনালাল বাজাজ অ্যাওয়ার্ড এমনই বহু পুরস্কার, বহু সম্মানে সম্মানিত হন তিনি৷ আর তাঁরই যোগ্য উত্তরসূরীরূপে নিজেকে প্রমাণ করেন তাঁর ছেলে ডঃ প্রকাশ৷ পাশে পান তাঁর সহধর্মিনী মন্দাকিনী আমতে-কে৷

বাবা আমতে গ্রামের মানুষদের পাশেই সর্বদা থাকতে চেয়েছিলেন৷ চেয়েছিলেন তাঁদের জন্যই কাজ করে যেতে৷ সেই ইচ্ছে পরবর্তীকালেও মূর্ত রূপ পায় ডঃ প্রকাশ আমতের উদ্যোগে৷ তবে এই ধরনের উদ্যোগের পিছনেও রয়েছে আরও একটি মর্মস্পর্শী ঘটনা৷ শোনা যায়, একদিন জঙ্গলের মধ্যে ডঃ প্রকাশ এবং তাঁর স্ত্রী যাচ্ছিলেন, তাঁরা হঠাৎ দেখেন, একদল মানুষ কিছু বাঁদরকে বেঁধে নিয়ে যাচ্ছে৷ তখন তাঁরা হতচকিত হয়ে যান৷ তাঁরা ওই দলটিকে গিয়ে বলেন, যদি বাঁদরগুলোকে নাম মেরে তাঁদের দিয়ে দেওয়া হয় তাহলে গ্রামবাসীদের সাহায্য করবেন এই দম্পতি৷ সেদিন থেকেই তাঁরা ঠিক করে নেন বাকি জীবনটা এই হেমলকাসা গ্রামেই কাটাবেন৷

এখন শুধু এই দম্পতিই নন, তাঁদের পরবর্তী দুই প্রজন্মও এই ভালোবাসার ভাষাতেই বিশ্বাসী৷ আপনিও শিখবেন নাকি?

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335