শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৯:২১ অপরাহ্ন

চুয়াডাঙ্গায় আমের কেজি ৯-৩৫, দাম নিয়ে হতাশ চাষি-ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক; চুয়াডাঙ্গায় আনুষ্ঠানিকভাবে আম পাড়ার দুই সপ্তাহ পার হয়েছে। আঁটি, গুটি ও বোম্বাইয়ের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে হিমসাগর আমও। কিন্তু গত মৌসুমের তুলনায় দাম প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। জাত ভেদে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি আমের দাম ৯-৩৫ টাকা পড়ছে। দাম এমন থাকলে লোকসানের আশঙ্কা করছেন আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা।

জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের তৈরি করা ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ১৪ মে থেকে চুয়াডাঙ্গায় আম সংগ্রহ ও বাজারজাত শুরু হয়। প্রথম পর্যায়ে এক সপ্তাহ ধরে আঁটি, গুটি ও বোম্বাই আম বেচাকেনা আশানুরূপ ছিল না। এর মধ্যেই দ্বিতীয় পর্যায়ে ২২ মে থেকে হিমসাগর আম সংগ্রহ ও বাজারজাত শুরু হয়েছে। বাজারে নতুন আমের আমদানি প্রচুর কিন্তু চাহিদা একেবারেই কম।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সেখানে ২৮ হাজার ২৬৫ টন আম উৎপাদনের সম্ভাবনা আছে। চলতি মৌসুমে জেলার ২ হাজার ৪৬৫ হেক্টর জমির আমের বাগানে আম চাষ হয়েছে। ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ২৫ মে ল্যাংড়া, ৫ জুন আম্রপালি ও বারি-৩, ২১ জুন ফজলি ও ১ জুলাই আশ্বিনা ও বারি-৪ আম সংগ্রহ এবং বাজারজাত করা হবে।

জেলার আমের সবচেয়ে বড় মোকাম চুয়াডাঙ্গা শহরের মাথাভাঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত বড়বাজার ফলপট্টিতে। প্রতিদিন ভোর থেকেই আম আমদানি ও বেচাকেনা শুরু হয় এখানে। বর্তমানে বাজারে চার ধরনের আম বাজারজাত বোম্বাই ও হিমসাগর আমের চাহিদাই বেশি। আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্য বছরের তুলনায় আমের দাম এবার কম।

বুধবার (২৪ মে) সকালে চুয়াডাঙ্গা বড়বাজারের ফলপট্টি ঘুরে দেখা যায়, আকার ও মান অনুযায়ী পাইকারি হিসেবে বোম্বাই আম প্রতি মণ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা দরে এবং আঁটি ও গুটি আম ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সদ্য বাজারে আসা হিমসাগর আম প্রতি মণ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, খুচরা বাজারের দোকানগুলোয় প্রতি কেজি হিমসাগর মান অনুযায়ী ৪৫-৫০ টাকা, বোম্বাই ৪০-৪৫ টাকা এবং আঁটি ও গুটি আম ১৫-২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা আড়ত থেকে আম কিনে বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করেন রবিউল আলী। তিনি বলেন, আড়ত থেকে আম কিনে নিয়ে যাচ্ছি। তবে এখনো বেচাকেনা লাগেনি। আমের উৎপাদন বেশি। তাই বিক্রি কম।

আড়তে আম বিক্রি করতে আসা বাবু বিশ্বাস বলেন, আমি তিন বিঘা জমিতে আম চাষ করেছি। এবার অনেক ভালো ফলন হয়েছে। আম চাষের ফলনে খরচ অনুযায়ী দাম পাচ্ছি না। এখনো মানুষ লিচুর ওপর ঝুঁকছেন। তাই এবার আমের ফলন বেশি হলেও দাম কম হওয়ায় লসের সম্ভাবনা আছে ব্যাপক।

ফলের আড়তদার শুকুর আলী ও মো. রফিক বলেন, চাহিদা বা ক্রেতার তুলনায় বাজারে বেশি ফল ওঠার কারণে দাম কিছুটা কম। কিছুদিনের মধ্যে বাজার বাড়তির দিকে যাবে। আমের বেচাকেনাও বাড়বে। বাজারে এখনো লিচুর চাহিদা ব্যাপক আছে। লিচুর চাহিদা কমলেই তবে আম বিক্রি বাড়বে। তখন দামও বাড়বে।

আম ব্যবসায়ী নুরুদ্দীন বলেন, এভাবে মূল্য কমতে থাকলে আমচাষির পুঁজি বাঁচবে না। চুয়াডাঙ্গার বাজার খুবই খারাপ। ফড়িয়ারা আম কিনে নিয়ে বেচতে পারছে না। আমের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় আমরা হতাশ।

চুয়াডাঙ্গা জেলা ফল ও আম ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক কালাম মিয়া  বলেন, এ বছর ১৪ মে থেকে আম সংগ্রহ ও বাজারজাত শুরু হয়েছে। প্রশাসনের পাশাপাশি সমিতির পক্ষ থেকে বিষয়টি নজরদারি করা হচ্ছে। তবে এখনো বাজারে লিচুসহ মৌসুমি বিভিন্ন ফল পাওয়া যাচ্ছে। তাই বাজারে আমের চাহিদা এখনো কম। এছাড়া কীটনাশক, শ্রমিক ও অন্য খরচ মিলে আমের দাম পাচ্ছি না। এতো কম দামে আম বিক্রি করলে চাষিদের পুঁজি বাঁচবে কীভাবে। সারাবছর খরচ করে যদি আমের দাম কম পাই তাহলে চাষিরা কীভাবে চলবে।

তিনি আরও বলেন, তবে চুয়াডাঙ্গার আম সারাদেশে বিখ্যাত। তাই এ আম যদি বিদেশে রপ্তানি করা যায়, তবে চাষি ও ব্যবসায়ীরা উপকৃত হতো। তারা দাম পেত।

গত বছর মৌসুমের শুরুতেই পাইকারি বাজারে প্রতি মণ হিমসাগর ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি মণ বোম্বাই আম ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। আর আঁটি ও গুটি আমের দাম ছিল ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকার মধ্যে। কিন্তু এবার তা প্রায় অর্ধেকে নেমেছে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335