বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:২৭ অপরাহ্ন

কেসিসির ৩ নম্বর ওয়ার্ড: জলাবদ্ধতা আর বিদ্যুৎ সমস্যা নিরসন হয়নি আজও

নিজস্ব প্রতিবেদক: নগরীর অতি গুরুত্বপূর্ণ পুলিশ থানা দৌলতপুর, প্রাচীন আমলের বিদ্যাপীঠসহ বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শ্রমিকদের কলোনি থাকলেও আজও যেন অনুন্নত পড়ে আছে খুলনা সিটি করপোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ড। যাতায়াত ব্যবস্থারও তেমন উন্নয়ন হয়নি।

করপোরেশন এলাকা হলেও অনেক বাড়িতে আজও পৌঁছায়নি বিদ্যুৎ সংযোগ। ড্রেনেজ ব্যবস্থায়ও লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া। যা আছে তাও দখল হয়ে আছে ময়লা আবর্জনায়। আজ পর্যন্ত কাউন্সিলরের অফিস নির্মাণ হয়নি এ ওয়ার্ডে।

অভিযোগ আছে, কাউন্সিলরের বাড়ির পাশেই মাদকের আড়ত। একই সঙ্গে আছে জলাবদ্ধতার দীর্ঘদিনের সমস্যা। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন এবং এলাকার উল্লেখ্যযোগ্য উন্নয়ন না হওয়ায় বর্তমান কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে চাইছেন তার দলের নেতারাই।

খুলা সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ৩ নম্বর ওয়ার্ডটি ভৈরব নদ, ডুমুরিয়া উপজেলার বিল ডাকাতিয়া, কেদারনাথ প্রধান সড়ক এবং পুরাতন সাতক্ষীরা সড়কের মধ্যবর্তী এলাকায় অবস্থিত। এ ওয়ার্ডে জনসংখ্যা আছে ৪০ হাজারেরও বেশি। আসন্ন নির্বাচনে ভোটার প্রায় ২০ হাজার। আছে ৫টি ভোট কেন্দ্র। এছাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পাঁচটি, বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় চারটি এবং একটি কলেজও। বিএডিসি, হর্টিকালচার, রেলস্টেশন, দৌলতপুর থানা, সড়ক ও জনপদের অফিস, বিজিএ ভবন, সাব রেজিস্ট্রি অফিসের গুরুত্বপূর্ণ অনেক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আছে এ ওয়ার্ডে।

সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, ২০১৮ সালের নির্বাচনে এ ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সালাম। নির্বাচনের আগে তিনি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার শতকরা ৭০ ভাগই আছে অপূর্ণ।

তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ অস্বীকার করে কাউন্সিলর আব্দুস সালামের দাবি, ‘শতভাগ উন্নয়ন করেছি ওয়ার্ডের। যদিও নতুন করে কিছু কাজের জায়গা তৈরি হয়েছে।’

এ ওয়ার্ডের অতিগুরুত্বপূর্ণ সড়ক হিসেবে পরিচিত থানা রোড। এ রোডের দুই পাশে আছে ইস্পাহানী শ্রমিক কলোনি। যেখানে পাট শ্রমিকসহ অন্য শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক কর্মচারীরা বসবাস করেন। কিন্তু অত্যন্ত সরু এ সড়কের দুপাশেই আছে ময়লা আবর্জনার স্তূপ। ড্রেনগুলোতে নেই পানি প্রবাহ। সর্বত্রই গ্রামের আবহ। ফলে অনেক বাড়িতে এখনো নেই বিদ্যুতের সংযোগ।

১২ জুনের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য এ ওয়ার্ড থেকে আওয়ামী লীগের তিনজন এবং জাতীয় পার্টির একজন নেতা প্রার্থী হতে চাইছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ নেতা এবং বর্তমান কাউন্সিলর আব্দুস সালাম, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি আছিফুর রশীদ আছিফ, সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ হাসান পিকু এবং জাতীয় পার্টির আশরাফুল ইসলাম সেলিম।

এলাকাবাসীর অভিযোগের তোয়াক্কা না করে বর্তমান কাউন্সিলর এবং প্রার্থী হতে আগ্রহী আব্দুস সালাম বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, তা পূরণের চেষ্টা করেছি। এতে শতভাগ সফল হয়েছি। মশক নিধন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং রাস্তা-ঘাটের যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে। মাদকের সমস্যা অনেকাংশ নির্মূল হয়েছে।

তবে এখনো কিছু কাজ বাকি আছে জানিয়ে কাউন্সিলর বলেন, সময়ের অভাবে ছোট ছোট কয়েকটি সড়ক করা হয়ে ওঠেনি। কিছু বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়নি। এছাড়া গোরস্থানের বাউন্ডারি এবং মাটি ভরাট প্রয়োজন। নির্বাচিত হলে আগামীতে এ কাজগুলোর মাধ্যমে ওয়ার্ডকে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলবো।

ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আছিফুর রশীদ আছিফ জাগো নিউজকে বলেন, ছাত্র জীবন থেকে আজ পর্যন্ত মাঠে-ময়দানে রাজনীতি করছি। বর্তমান কাউন্সিলর তার প্রতিশ্রুতির মাত্র ৫০ শতাংশ কাজ করেছেন। এ ওয়ার্ডের মধ্যপাড়া, পালপাড়া, পশ্চিমপাড়ার রাস্তা ও ড্রেনের উন্নয়ন প্রয়োজন। কিন্তু তা করা হয়নি। আজ পর্যন্ত একটি ওয়ার্ড অফিস এবং কমিউনিটি সেন্টারও জোটেনি ওয়ার্ডবাসীর ভাগ্যে। নেই খেলার পর্যাপ্ত মাঠ, নির্মাণ হয়নি বিনোদনের জন্য কোনো পার্ক।

ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক কাউন্সিলর মাকসুদ হাসান পিকু জাগো নিউজকে বলেন, গতবার বর্তমান কাউন্সিলরের আশ্বাস এবং অনুরোধে ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি সে কথা রাখছেন না। তিনি আজ পর্যন্ত ওয়ার্ড অফিস করতে পারেননি। মাদকের আগ্রাসন এখানে ভয়াবহ। সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া কিছু হয়েছে এখানে। কিন্তু কাউন্সিলরের কোনো কাজ হয়নি এবং তার বাড়ির পাশেই মাদকের আড়ত।

দল এবার পূর্ণ সমর্থন দিবে বলে মনে করেন জাতীয় পার্টির আশরাফুল ইসলাম সেলিম। তিনি বলেন, বর্ষায় এ ওয়ার্ডের রাস্তার হাঁটুপানি থাকে। হাসান খান রোডে ছয়মাসই জলাবদ্ধতা থাকে। মশার উপদ্রব, মাদক বিক্রেতা এবং সেবীদের উৎপাতে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। জনবিচ্ছিন্ন কাউন্সিলর এবং তার অফিস। স্থানীয় মানুষের সমস্যা দিন দিন জটিল হচ্ছে। এলাকায় কাউন্সিলরের প্রতিশ্রুতি ৭০ শতাংশই বাস্তবায়িত হয়নি। গতবার তিনি বলেছিলেন, আর নির্বাচন করবেন না। তবে শুনছি, এবারও তিনি নির্বাচন করবেন। এবার জনগণ উচিত জবাব দিয়ে দেবে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335