শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:২২ অপরাহ্ন

পেঁয়াজে লাভের আশায় ‘গুড়েবালি’

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি বছর পেঁয়াজের ফলন বেশ ভালো হয়েছে। আশা করেছিলাম এবার লাভের মুখ দেখবো। সেই আশায় গুড়েবালি। শুরুতেই দাম নেই। বর্তমানে প্রতি মণ পেঁয়াজ ৬০০-৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ এক কেজির দাম ১৫-১৭ টাকা। এভাবে চলতে থাকলে লাভ তো হবেই না; উৎপাদন খরচ নিয়ে চিন্তায় আছি। সব খরচ বাদে প্রতি বিঘায় কমপক্ষে ১০-১২ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হবে।

কথাগুলো বলছিলেন ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার টোংরাইল গ্রামের পেঁয়াজ চাষি কালী কুমার বালা। তিনি বলেন, বর্তমানে বাজারে পেঁয়াজের যে দাম তাতে উৎপাদন খরচই উঠবে না।

ফরিদপুর জেলা পেঁয়াজ চাষের জন্য বিখ্যাত। কিছুদিন পরই পুরোদমে শুরু হবে পেঁয়াজ তোলা। জেলায় এবারও পেঁয়াজের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মৌসুম শুরুর আগেই পেঁয়াজের দাম অনেক কম থাকায় কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজের আবাদ হয় নগরকান্দা ও সালথা উপজেলায়। এ দুই উপজেলাকে ‘পেঁয়াজের রাজধানী’ বলা হয়। তবে গত বছর থেকে পেঁয়াজ নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষকরা। গত বছর পেঁয়াজ আবাদ করে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় মোটেই লাভবান হতে পারেননি তারা। তাই গত বারের মতো এবারও শুরুতেই পেঁয়াজের দাম কম থাকায় চিন্তায় পড়েছেন সাধারণ কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। গত বছরের লোকসান সামাল দিয়ে চলতি বছর পেঁয়াজ বিক্রি করে ঘুরে দাঁড়ানোর যে আশা করেছিলেন তাতে অনেকটাই গুড়েবালি।

ফরিদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের মধ্যে ফরিদপুর জেলা পেঁয়াজ চাষে বিখ্যাত। বিশেষ করে সালথা উপজেলার কৃষকদের প্রধান ফসল পেঁয়াজ। প্রতিটি মৌসুমের উৎপাদিত পেঁয়াজই অত্র অঞ্চলের সাধারণ কৃষকদের সারা বছরের জীবিকার জোগান দেয়। তবে দাম কমের কারণে প্রতি বছরই কমছে পেঁয়াজের আবাদ। ২০২০-২১ অর্থবছরে জেলায় মোট ৪০ হাজার ৭৯ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪০ হাজার ৯৭ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করা হয়। তবে চলতি মৌসুমে ৩৫ হাজার ৮৭৬ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ করা হয়েছে। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এবার পেঁয়াজ চাষ কমেছে।

 

সালথা উপজেলার পেঁয়াজ চাষি বিধান কুমার মণ্ডল  বলেন, ‘গত মৌসুমে প্রতি মণ কাঁচা পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ৭০০-৮৫০ টাকায়। পুরো বছরের জন্য কিছু পেঁয়াজ বেশি দামে বিক্রির আশায় ঘরে মজুত করে রেখেছিলাম। তা শুকিয়ে অনেক ঘাটতি হয়। বছর শেষে সেই শুকনা পেঁয়াজ প্রতি মণ বিক্রি করেছি ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায়। সর্বোচ্চ দেড় হাজার টাকায়। হিসাব করে দেখা গেছে, লাভ তো দূরের কথা, উৎপাদন খরচই উঠছে না।’

কথা হয় শেখর ইউনিয়নের চর শেখর গ্রামের পেঁয়াজচাষি মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি  বলেন, ‘এবার এক একর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছি। তাতে প্রায় লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। বর্তমানে যে বাজারদর তাতে আমাদের খরচও উঠবে না। বরং বড় লোকসানে পড়তে হবে।’

নগরকান্দা উপজেলার পুরাপাড়া গ্রামের চাষি নুর ইসলাম মোল্লা  বলেন, ‘সার, কীটনাশক, সেচ, শ্রমিকের মজুরি ও পরিবহনসহ সব মিলিয়ে ৮০-৯০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়েছে। তাতে দাম না বাড়লে বড় লোকসানে পড়তে হবে।’

সালথা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জীবাংশু দাস বলেন, সারাদেশের মসলা ফসলের অন্যতম জোগানদাতা সালথার কৃষকরা। প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয় সালথায়। এবার আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ১০ হাজার ৩৯৫ হেক্টরের বিপরীতে ১০ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে হালি পেঁয়াজ চাষ করা হচ্ছে। ফলনও আশানুরূপ হবে প্রত্যাশা করি।

পেঁয়াজচাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হয়েছে। প্রতি বিঘায় গড়ে ৬০-৬৫ মণ করে ফলন হয়েছে। প্রতি মণে উৎপাদন খরচ হয়েছে ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকার মতো।

এ বিষয়ে ফরিদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জিয়াউল হক  বলেন, আশা করা যাচ্ছে এবারও বাম্পার ফলন হবে। তবে দামের বিষয়টিতে আমাদের হাত নেই। আমরা ভালো ফলনে এবং বিভিন্ন বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ ও সহযোগিতা করি।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335