শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৩৭ অপরাহ্ন

চরে একের পর এক গবাদিপশু চুরি, ৫ দপ্তরে অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে মেঘনা নদীবেষ্টিত বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ইউনিয়ন চরআবদুল্লাহতে দেড় শতাধিক গবাদিপশু চুরির ঘটনায় সংঘবদ্ধ চোরদের শাস্তির দাবিতে পাঁচ দপ্তরে অভিযোগ করা হয়েছে।

চুরি হওয়া সাতটি গরু উদ্ধার ও চোরদের শাস্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) বিকেলে ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে কৃষক নাজিম উদ্দিন জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় হাঁস দিদারের নেতৃত্বে এসব চুরির ঘটনা ঘটছে। দিদার চরআবদুল্লাহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মঞ্জুর অনুসারী।

এরআগে বুধবার (১ মার্চ) রামগতি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরাফ উদ্দিন আজাদ সোহেল ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম শান্তুনু চৌধুরীর কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়। একই অভিযোগ করা হয় জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মাহফুজ্জামান আশরাফ ও রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেনের কাছেও।

অভিযোগকারী নাজিম উদ্দিন চরআবদুল্লাহ ইউনিয়নের চরআবদুল্লাহ গ্রামের মৃত মো. হানিফের ছেলে। তিনি পেশায় একজন কৃষক। গরুর দুধ বিক্রি ও উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিক্রি করে তার সংসার চলতো। মহিষ দিয়ে উৎপাদিত ফসল বিনষ্ট ও গরুগুলো চুরি হয়ে যাওয়ায় কষ্ট করে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে তাকে। স্ত্রী, পাঁচ মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে দুর্দশায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ জানুয়ারি চরআবদুল্লাহতে নাজিমের ১৮০ শতাংশ জমির খেসারির ডাল বাথানমালিক লাইলির বাবা, কাশেম, নুরনবী ও সেলিম হুজুরের মহিষ খেয়ে ফেলে। এতে তিনি মহিষগুলো বেঁধে রেখে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। পরে হাসান নামের এক বাথানমালিক ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়ে মহিষগুলো ছাড়িয়ে নেয়। কিন্তু পরদিন রাতেই নাজিমের গোয়ালে থাকা সাতটি গরু চুরি করে নিয়ে যায় চোরের দল।

এ ঘটনায় নাজিম রামগতি থানায় হাঁস দিদার, ইউছুফ, রাসেল, আবদুর রহমান, দিদার, সুমন ও বাবুলসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন। অভিযোগের কথা শুনে রাগান্বিত হয়ে রাসেল অন্যান্য বাথানমালিকদের গরু চুরির ঘটনা স্বীকার করেন। তবে নাজিমের অভিযোগের কারণে ওই গরুগুলো ফেরত দেবেন না বলে হুমকি দেন। তখন রাসেল হাঁস দিদারের নাম উল্লেখ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে থানাপুলিশ অভিযুক্ত রাসেলকে আটক করে। পরে মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়।

অভিযোগে আরও বলা হয়, হাঁস দিদার পলাতক ছিলেন। কয়েকদিন পর প্রকাশ্যে এসে তিনি চুরি হওয়া গরুর মালিকদের হুমকি দেন। তিনি একটি নৌকায় করে নাজিমের সাতটি গরু চোরের দল নিয়ে যায়। নৌকাটিও চোরাই ছিল। পরে মেঘনা নদীর বয়ারচর এলাকা থেকে মালিক নৌকাটি উদ্ধার করেন। সম্প্রতি চর থেকে বারেক মাঝির চারটি, তার ভাতিজার চারটি, জসিমের তিনটি, মাওদ গাজীর চারটি, নাজু মাঝির আাটটি গরুসহ বিভিন্ন জনের শতাধিক গরু নিয়ে গেছে চোরের দল। এছাড়া বিভিন্ন জনের প্রায় ২৭টি ভেড়া চুরির ঘটনা ঘটেছে।

এ বিষয়ে চরআবদুল্লাহ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মঞ্জুর বলেন, ‘নাজিম থানায় অভিযোগ দিয়েছে শুনেছি। তবে হাঁস দিদারের জড়িত থাকার বিষয়টি সত্য নয়। শুনেছি তার নামেও নাকি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।’

হাঁস দিদার তার লোক কি না জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম শান্তুনু চৌধুরীর দাপ্তরিক মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা (এসএমএস) পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।

রামগতি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরাফ উদ্দিন আজাদ সোহেল বলেন, অভিযোগটি পেয়েছি। কিন্তু এটি পুলিশ প্রশাসনের কাজ।

তিনি বলেন, পুলিশের যাতায়াতের সুবিধার জন্য আমাদের দুটি ওয়াটার অ্যাম্বলেন্স রয়েছে। ইউএনওর সঙ্গে কথা বলে তারা অ্যাম্বুলেন্সগুলো ব্যবহার করতে পারবেন। এতে ২০ মিনিটেই তারা চরে অভিযান পরিচালনা করতে পারবেন।

রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, চরআবদুল্লাহ বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ। সেখানে ট্রলার ভাড়া করে যাতায়াতে প্রচুর টাকা খরচ হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লাগে যেতে। দুর্গম এ চরে সচরাচর অভিযান চালানো সম্ভব হয় না।

তিনি বলেন, নাজিমের অভিযোগের ভিত্তিতে রাসেল নামের একজনকে আমরা আটক করেছি। নাজিম সন্দেহজনকভাবে তার নাম দেন। জিজ্ঞাসাবাদের চুরির ঘটনায় রাসেলের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। তাই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। নাজিমকে বলা হয়েছে চুরির ঘটনায় সম্পৃক্ত আছেন, যাদের আটক করলে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যাবে তাদের নামে অভিযোগ করার জন্য। কিন্তু নাজিম আর আসেননি।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335