শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০২:২৫ অপরাহ্ন

বিচারকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবার নীলফামারীর আইনজীবী সমিতির সভাপতিকে তলব

নিজস্ব প্রতিবেদক: আদালতে ‘বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, আইন-আদালতের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন ও বিচারকের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের’ অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে নীলফামারী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজুল হক, আইনজীবী মো. আজহারুল ইসলাম, আইনজীবী ফেরদৌস আলমকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি সশরীরে হাইকোর্টে উপস্থিত হয়ে তাদের ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

একই সঙ্গে আদালত অবমাননার দায়ে নীলফামারী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজুল হকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।

নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রাজজ) গোলাম সারোয়ারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (২৫ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

গত ২৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) গোলাম সারোয়ারের পাঠানো পত্রে বলা হয়— গত ২৮ নভেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণকারী আসামি হাছিনা বেগমের আত্মসমর্পণ করে জামিন শুনানি, আসামি আইনুল হকের জামিনের মেয়াদ বাড়ানো এবং হাজতি আসামি হাছানের জামিন শুনানির দিন ছিল। আমি পুলিশ রিপোর্ট, চিকিৎসা সনদ পর্যবেক্ষণ করে এবং আদালতে উপস্থিত ভুক্তভোগী মোছা. মারুফাকে পরীক্ষা অঙ্কে হাজতি আসামির জামিন নামঞ্জুর করি। অপর আসামিদের জামিন আবেদন ও মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন নামঞ্জুর করে জেল-হাজতে পাঠানো নির্দেশ দিই।

ওই আদেশ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই মামলা পরিচালনায় নিয়োজিত আইনজীবী মমতাজুল হক, আইনজীবী মো. আজাহারুল ইসলাম, আইনজীবী ফেরদৌস আলমসহ তাদের সহযোগী আইনজীবীরা মারমুখী আচরণ করেন। এ ছাড়া আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে এজলাসের টেবিল চাপড়িয়ে গালাগাল করেন এবং হামলার চেষ্টা করেন। হুমকি দিয়ে তারা বলেন— ‘জামিন দিয়ে নেমে যা, সরি বল, চাকরি করার দরকার নেই, বাড়ি গিয়ে বসে থাক, কোথা থেকে পড়াশোনা করেছো, আইন-কানুন জানো না। নীলফামারীর বার খুবই ভয়ঙ্কর। এর আগে অনেক বিচারককে পিটিয়ে এখান থেকে তাড়িয়েছি, কোথা থেকে এসেছো, এসেই উল্টাপাল্টা আদেশ দাও।

এ পরিস্থিতিতে এজলাসের অবস্থা বেগতিক দেখে আমি তাদের সঙ্গে কোনরূপ তর্কে না জড়িয়ে তাৎক্ষণিকভাবে এজলাসের কার্যক্রম মুলতবি রেখে খাস কামরায় চলে যাই। খাস কামরায় কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি। অপেক্ষা করাকালীন সময়েও ওই আইনজীবীরা আমাকে জঘন্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।

এ ঘটনায় আমি বাংলাদেশ বিচার বিভাগের অধস্তন আদালতের সর্বোচ্চ পদে আসীন হিসেবে হতাশ, বাকরুদ্ধ, মর্মাহত, লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়েছি এবং এ ঘটনার কারণে আমিসহ এ জেলার বিচারকরা নিরাপত্তাহীনতাসহ লাঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কাবোধ করছেন।

এমতাবস্থায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আদালতের সদয় মর্জি হয়।

গত ২৯ ডিসেম্বর নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রাজজ) গোলাম সারোয়ারের পাঠানো অভিযোগপত্রটি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল প্রধান বিচারপতির কাছে উপস্থাপন করেন।

গত ৩ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি অভিযোগপত্রটি বিচারের জন্য হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেন। তার ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি আদেশের জন্য হাইকোর্টের কার্যতালিকায় উঠে।

খুলনা, পিরোজপুর ও সর্বশেষ ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সম্প্রতি দেশের কয়েকটি জেলায় বিচারকের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় আইনজীবী সমিতির সভাপতি-সম্পাদকসহ অন্যদের তলব করেছেন আদালত।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335