নারী উদ্যোক্তাকে যৌন হয়রানি, ইউপি চেয়ারম্যান বরখাস্ত

gtbnews
1. ২৪ জানুয়ারী, ২০২৩ / ১০৩ বার পঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক: নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাসুদ রানাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

সোমবার (২৩ জানুয়ারি) বিকেলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ সাঈদ-উর-রহমান সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানা যায়।

চেয়ারম্যান মাসুদের বিরুদ্ধে একই ইউনিয়নের এক নারী উদ্যোক্তা যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২৬ অক্টোবর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জেসমীন প্রধান সই করা এক স্মারকে চেয়ারম্যান মাসুদ রানাকে ১০ কার্যদিবসে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছিল।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বদলগাছী উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদ রানা। তার বিরুদ্ধে একই ইউনিয়নের ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের (ইউডিসি) এক নারী উদ্যোক্তাকে যৌন হয়রানি এবং অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। পরবর্তীকালে তদন্তে বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন-২০০৯- এর ৩৪ (ঘ) ধারা অনুযায়ী নওগাঁ জেলা প্রশাসক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হলো।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, চেয়ারম্যান মাসুদ রানা সংঘটিত অপরাধমূলক কার্যক্রম ইউনিয়ন পরিষদসহ জনস্বার্থের পরিপন্থী বিবেচনায় স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ৩৪ (৪) (ঘ) ধারার অপরাধ সংঘটিত করায় একই আইনের ধারা ৩৪ (১) অনুযায়ী উল্লিখিত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে তার পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।

২০২২ সালের ১৩ জুন জেলা প্রশাসকসহ, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছিলেন ওই নারী উদ্যোক্তা।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর থেকে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের (ইউডিসি) উদ্যোক্তা হয়ে কাজ করছেন ওই নারী। ২০২১ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আগ থেকে চেয়ারম্যান মাসুদ রানা তাকে বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানি করে আসছেন। মাসুদ রানা তাকে মোবাইলফোনে এবং বেশকিছু চিঠির মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে তার যৌন হয়রানি আরও বেড়ে যায়। কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে নারী উদ্যোক্তার ব্যবহৃত মুঠোফোনটি কেড়ে নেন। এরপর মুঠোফোন থেকে কিছু গোপন তথ্য ডিলিট করে পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে ফোন ফেরত দেন।

ওই নারী উদ্যোক্তার সংসার রয়েছে এবং দুটি যমজ কন্যা সন্তানও আছে। চেয়ারম্যানের এমন যৌন হয়রানির কারণে তার সংসারে কলহসহ কর্মক্ষেত্রেও সমস্যার সৃষ্টি হয়। অবশেষে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটে। ঘটনার পর থেকে তার কর্মস্থলসহ সামাজিকভাবে চলাচলের সমস্যা হচ্ছে এবং নানাভাবে হেয়প্রতিপন্ন হতে হচ্ছে।

সাময়িক বরখাস্তের বিষয়ে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান মাসুদ রানা বলেন, চিঠি এখনো হাতে পাইনি। তবে ফেসবুকে দেখেছি আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে হেয় করতে আমার বিরোধীপক্ষ চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করেছিল। যেহেতু মিথ্যা একটা বিষয় নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে আমি আইনিভাবে লড়বো। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক নয়।

তবে বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে স্থানীয় সরকার বিভাগ নওগাঁর উপ-পরিচালক উত্তম কুমার রায় বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি বিকেলে হাতে পেয়েছি। চেয়ারম্যান মাসুদ রানাও হয়তো চিঠি পেয়েছেন। তার হাতে যখন চিঠিটি পৌঁছাবে তখন থেকেই বরখাস্ত কার্যকর হবে। তার পরিবর্তে যিনি প্যানেল চেয়ারম্যান আছেন, তিনি দায়িত্ব পালন করবেন।

নিউজটি শেয়ার করুন