মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:২৩ অপরাহ্ন

লোকসানের শঙ্কায় চাষি চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি আলুর, রপ্তানিতে সমাধান খুঁজছে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে বার্ষিক আলুর চাহিদা ৮৫ থেকে সর্বোচ্চ ৯০ লাখ টন। গত বছর (২০২১-২২ মৌসুম) উৎপাদন হয়েছিল এক কোটি ১০ লাখ টন আলু। পূরণ হয়েছে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রাও। এবছরও আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। নতুন আলু উঠছে সব বাজারে। যদিও গত বছর কোল্ড স্টোরেজে রাখা আলু এখনো রয়ে গেছে। চাহিদার চেয়ে আলুর উৎপাদন প্রায় প্রতি বছর বেশি হওয়ায় সমস্যায় পড়েন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। সমস্যা থেকে উত্তরণে সরকারেরও রয়েছে নানান উদ্যোগ। তবে রপ্তানি বাড়ানোয় আপাতত সমাধান খুঁজছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

জানা যায়, চাহিদার চেয়ে বাড়তি উৎপাদনের কারণে বাজারে দ্রুত কমে আসছে আলুর দাম। এতে এ মৌসুমেও লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন সারাদেশের আলু চাষিরা। আগাম আলুতে প্রত্যাশিত ফলন পেলেও বাজারে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত দাম।

বগুড়ার বেশ কিছু চাষি জানান, বিগত মৌসুমে এই সময় তারা ক্ষেত থেকেই প্রতি কেজি আগাম জাতের গ্যানুলা ও ডায়মন্ড আলু ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছেন। এবছর সেই আলু ৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা উৎপাদন খরচের চেয়ে কম।

মোকামতলা এলাকার চাষি সিরাজ হোসেন  বলেন, এক বিঘা জমিতে আগাম আলু উৎপাদন হয়েছে ৭৫ মণ। যেখানে সেচ, সার, কীটনাশক ও মজুরি খরচ বাড়ায় মোট ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। সে হিসাবে প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ পড়ে ১০ টাকার কিছুটা বেশি।

তিনি বলেন, আগাম আলু আবাদে খরচ বেশি হলেও বাজারদরে তা পুষিয়ে যায়। কিন্তু এবার লোকসান হচ্ছে। আর খুব তাড়াতাড়ি আলুর বাজার পড়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন আলুর দাম মণে কমছে ৫০-৬০ টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোল্ড স্টোরেজে গত মৌসুমের আলুর মজুত এখনো শেষ হয়নি। নতুন আলু আসার পর থেকে সেগুলোর দামও পড়ে গেছে। সে কারণে সংরক্ষিত আলুও তুলছেন না চাষিরা।

কোল্ড স্টোরেজের সাধারণত ছয় থেকে নয় মাস পর্যন্ত আলু সংরক্ষণ করা যায়। সে হিসেবে গত মৌসুমের আলু নভেম্বরের পর আর স্টোরেজে রাখা সম্ভব হয় না। নতুন আলু ডিসেম্বরে উঠতে শুরু করে, যা চলে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত। কিন্তু এখনো উদ্বৃত্ত আলু থাকায় স্টোরেজগুলোতে নতুন আলু সংরক্ষণে সমস্যা হচ্ছে।

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, হিমাগারগুলোতে এখনো দেড় লাখ বস্তা আলু রয়েছে। এগুলোর দাম পড়ে গেছে। কেউ নিচ্ছে না, কৃষকরাও ওঠাচ্ছেন না।

তিনি বলেন, মুন্সিগঞ্জে প্রতি কেজি কোল্ড স্টোরেজের আলুর দাম পাঁচ-ছয় টাকায় নেমেছে। সেজন্য ভাড়া পরিশোধ করে আলু নিলে কৃষকের লোকসান হচ্ছে। ব্যবসায়ীরাও মজুত আলু নিয়ে রয়েছেন বিপদে। যার প্রভাব পড়ছে সার্বিক বাজারে।

দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থা থেকে কাটিয়ে উঠতে আলু রপ্তানি, ত্রাণ ও রেশনিং কার্যক্রমে আলুর ব্যবহার এবং আলুতে ভর্তুকি দাবি করে আসছে কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটি কাবিখা, ভিজিএফ, ভিজিডি এবং ওএমএসের পাশাপাশি জাতীয়ভাবে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, আনসার, ভিডিপি, এতিমখানা, জেলখানাসহ বিভিন্ন স্থানে আলু বিতরণের দাবি করেছে। একই সঙ্গে রপ্তানিতে নগদ সহায়তা বৃদ্ধি ও কোল্ড স্টোরেজের মালিকদের ঋণ পুনঃতফসিলের দাবিও করা হয়।

বাড়তি আলু নিয়ে সমস্যা সমাধানে রপ্তানি বৃদ্ধিই সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ মনে করে একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এতে আলু রপ্তানি বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। গত জুনে গঠন করা হয়েছে একটি কমিটি। এ রোডম্যাপ বাস্তবায়ন করা গেলে আলু রপ্তানির ক্ষেত্রে ২০২২ সালের মধ্যে ৮০ হাজার টন, ২০২৩ সালে ১ লাখ ২০ হাজার টন, ২০২৪ সালে ১ লাখ ৮০ হাজার টন এবং ২০২৫ সালে ২ লাখ ৫০ হাজার টন আলু রপ্তানি করা সম্ভব হবে।

এর মধ্যে রপ্তানির প্রথম বছরের টার্গেট সফল হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশ থেকে মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, সিঙ্গাপুরসহ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ৮০ হাজার টন গোল আলু রপ্তানি হয়েছে। তবে দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে যে পরিমাণ আলু উদ্বৃত্ত থাকে, সেই তুলনায় রপ্তানির পরিমাণ খুবই সামান্য।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালক মোখলেছুর রহমান  বলেন, ‘উদ্বৃত্ত আলু সমস্যা, তবে সার্বিকভাবে এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। রপ্তানির পরিমাণ কম হওয়ার বড় কারণ হলো, রপ্তানি উপযোগী মানসম্মত আলু এদেশে তেমন উৎপাদিত হচ্ছে না। সেজন্য টেকসই কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে গুণগত মানসম্মত আলু উৎপাদনের জন্য কৃষকদের তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। বাড়ানো হচ্ছে মানসম্মত আলু উৎপাদন।

এছাড়া আলু দিয়ে তৈরি নানা ধরনের পণ্য রপ্তানি ও অভ্যন্তরীণ ভোগ বাড়াতে কার্যক্রম চলছে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335