মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০২:২০ অপরাহ্ন

শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে এক জেলায় ৪৮৪ জন হাসপাতালে

নিজস্ব প্রতিবেদক: যমুনা নদীর পাড়ের জেলা সিরাজগঞ্জে তীব্র শীত, হিমেল বাতাস ও ঘন কুয়াশায় ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শাসকষ্টজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। এক সপ্তাহে জেলা সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ৪২০ জন ডায়রিয়া ও ৬৪ জন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। প্রতিদিনই ভর্তি হচ্ছেন শিশুসহ নানা বয়সী রোগী। আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেশিরভাগই শিশু ও বৃদ্ধ।

এদিকে, অতিরিক্ত রোগীর চাপ হওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। এতে শয্যা খালি না থাকায় অনেকে মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অভিভাবকরা সচেতন হলে এই রোগ থেকে শিশুদের সহজে রক্ষা করা সম্ভব বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে সদর উপজেলায় ১৪, কাজিপুরে ১৩, রায়গঞ্জে ৫৭, তাড়াশে ৩০, উল্লাপাড়ায় ৬২, বেলকুচিতে ৪২, শাহজাদপুরে ২২, কামারখন্দে ১৩০ ও সদর হাসপাতালে ৫০ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী গত সাত দিনে ভর্তি হয়েছেন। একই সময়ে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে জেলার ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন ৬৪ জন। যাদের অনেকের বয়স এক থেকে দেড় বছর।

রায়গঞ্জ উপজেলা থেকে সন্তানকে নিয়ে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হাসপাতালে আসা আল্পনা বেগম জানান, তার সন্তান ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছিলেন। সেখানে দুদিন চিকিৎসা শেষে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। বর্তমানে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

বেলকুচি উপজেলার চালা গ্রামের হামিদ শেখ জানান, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তিন দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। চিকিৎসা চলছে। পাতলা পায়খানা কমেনি। চিড়া আর স্যালাইনের পানি খাচ্ছেন। শরীরে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। এখন একটু ভালো আছেন।

সেবা নিতে আসা শহরের বাহিরগোলা মহল্লার কহিনুর বেগম জানান, তিন দিন আগে মেয়ের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন। প্রথম দিন শ্বাস নিতে অনেক কষ্ট হয়েছে মেয়ের। এখন অবস্থা কিছুটা ভালো।

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের পরিসংখ্যান বিভাগের সিনিয়র নার্স জীবন্নাহার জানান, এক সপ্তাহ ধরে ৫০ জন ডায়রিয়া এবং ৩৬ জন নিউমোনিয়া রোগী ভর্তি রয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে ভর্তি হয়েছেন ১০ জন। ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি হওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যারা রোগীর কাছে থাকেন- তারা সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পর খাওয়া-দাওয়া করার বিষয়ে আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।

হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মেহেদি হাসান বলেন, রাত ও দিনে প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া ধুলাবালিও এ রোগ বৃদ্ধির কারণ। শিশুদের এ থেকে রক্ষায় ঠান্ডা এবং গরম থেকে সতর্ক রাখতে হবে। তাছাড়া ধুলাবালির সংস্পর্শ থেকে রক্ষা করতে হবে। হাসপাতালে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া ওয়ার্ডে শয্যা সংখ্যা ৪০টি। শয্যা স্বল্পতার কারণে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সবমিলিয়ে হাসপাতালের পরিস্থিতি খারাপ পর্যায়ে রয়েছে।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. ফরিদুল ইসলাম জানান, তীব্র শীতের কারণে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। ঠান্ডার কারণে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত এসব রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। এতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। তাদের সবসময় গরম পরিবেশে রাখতে হবে। ডায়রিয়া প্রতিরোধের জন্য সবসময় গরম খাবার খেতে হবে। কোনও সময় ঠান্ডা বা পচা ও বাসি খাবার খাওয়ানো যাবে না বলে পরামর্শ দেন এ চিকিৎসক।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. রামপদ রায় বলেন, তীব্র শীতই মূলত ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার কারণ। তবে ঠান্ডাজনিত রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্যালাইন, অ্যান্টিবায়োটিকসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ পর্যাপ্ত মজুত আছে। এ ছাড়া হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের জন্য কম্বলের ব্যবস্থা রয়েছে। এই রোগ থেকে শিশুদের রক্ষায় অভিভাবকদের সচেতন করা হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জে তাড়াশের আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, নদী অববাহিকা অঞ্চলগুলোতে ঘন কুয়াশা পড়ছে। এ অঞ্চলে আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সপ্তাহে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335