মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৪৯ অপরাহ্ন

শিক্ষাভবনের ত্রিশঙ্কু তেলেসমাতি- গোলাম মাওলা রনি

এত্তো বড় গুণধর ভবন বাংলাদেশে দ্বিতীয়টি নেই। ভবনটির অতীত ও বর্তমানের কর্তাব্যক্তি এবং তাদের চ্যালা-চামুণ্ডাদের কর্মকাণ্ডে এর যশ-খ্যাতি বাংলার সীমানা পেরিয়ে অন্য দেশে রফতানি হওয়ার জন্য কাঁচুমাচু করছে। এখানকার দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়ম রীতিমতো কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছে। এই ভবনের দুর্নীতির নটরাজ এবং নটিরানীরা তাবৎ বাংলার সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত, হাট-বাজার এবং প্রমোদ ভবনগুলোর কুলাঙ্গারদের শিরোমণি হিসেবে দাপটের সাথে রাজত্ব করে আসছে বহু দিন থেকে। অনেক ভালো মানুষ এই ভবনের কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ লাভের পর হয়তো মন্দ হতে বাধ্য হয়েছেন- নয়তো দুর্নীতিবাজদের চাপ, অত্যাচার এবং অন্যায় আবদারে অতিষ্ঠ হয়ে প্রতিদিন আল্লাহর দরবারে নিজের মুক্তি অথবা মৃত্যু কামনা করে চোখের পানি ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন।
বাংলাদেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু হলো এই ভবন। সরকারি নাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর। সংক্ষেপে যাকে বলা হয় মাউশি। একজন ডিজি বা মহাপরিচালকের নেতৃত্বে পরিচালিত ভবনটি সারা বাংলাদেশের সব সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ করে। শিক্ষকদের নিয়োগ, বদলি, শাস্তি, পদোন্নতি, ছাত্রছাত্রীদের মান নিয়ন্ত্রণ, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নতুন ভবন নির্মাণ, পুরনোগুলোর মেরামত, শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওপর কর্তৃত্ব, মন্ত্রণালয়সহ সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয় ইত্যাদি হাজারো কর্মের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব এই ভবনের কর্তাব্যক্তিরা ভোগ করেন। যারা ভালো তারা তাদের সেবা দিয়ে দুনিয়া ও আখরাতের কল্যাণ করেন। অন্য দিকে, মন্দলোকেরা ভুক্তভোগীদের হাতে কলমে খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে দেন, শয়তান কত প্রকার এবং কী কী?
শিক্ষাভবনের দুর্নীতি নতুন কোনো বিষয় নয়। চলে আসছে শুরু থেকে। মাঝে মধ্যে অবশ্য দুর্নীতির রকমফের হয়। এটা মূলত নির্ভর করে ডিজি’র ওপর। লোকটি যদি ধড়িবাজ ও দুর্নীতিপরায়ণ হন, তবে শিক্ষাভবনের ইট-পাথর বালু থেকে শুরু করে শৌচাগারের বদনাটিও দুর্নীতির উল্লাসনৃত্য শুরু করে। অন্য দিকে, ডিজি যদি ভালো মানুষ হন, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভালো ফল শুরু হয়। বর্তমান ডিজির নিয়োগ লাভের পর অনেকেই আশা করেছিলেন এবার বোধহয় শিক্ষাভবনের কিছু একটা হিল্লে হবে। নতুন ডিজির বর্ণাঢ্য সার্ভিস রেকর্ড এবং রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে লোকজনের আশার পরিধি বেড়ে গিয়েছিল বহু গুণে। প্রথম প্রথম তিনিও বেশ ভালোভাবেই চালাচ্ছিলেন। মন্ত্রীর সাথে সুসম্পর্ক এবং প্রশাসনের অন্যান্য স্তরে স্বামী ও ভাইয়ের কল্যাণে যোগাযোগ রাখার দরুন তার অধীনস্থরা এমনিতেই তাকে সমীহ করতেন। সবাই জানত, তাদের ডিজির স্বামী প্রধানমন্ত্রীর সাবেক ব্যক্তিগত সচিব ছিলেন এবং বর্তমানের সংসদ সদস্য। অন্য দিকে, বড় ভাই একজন ডাকসাইটে মন্ত্রী এবং সরকারি দলের প্রভাবশালী নেতা। ডিজি নিজেও বেশ রাশভারী প্রকৃতির মানুষ এবং অতীতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করার পরও আর্থিক কেলেঙ্কারি বা অনিয়মের অভিযোগে অভিযুক্ত হননি। ফলে শিক্ষাভবন নামের জটিল স্থানে অধিষ্ঠিত হওয়ার পরও প্রথম প্রথম তার দিনকাল ভালোই কাটছিল।
শিক্ষাভবনের বর্তমান ডিজির সাবেকী সেই সুদিন এখন আর নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নতুন একজন সচিব যোগদান করার পরই পুরো শিক্ষাক্ষেত্রে রাম-লক্ষণ ও রাবণের ত্রিশঙ্কু রাজনীতি শুরু হয়। প্রতিটি বিভাগ-অনুবিভাগে শুরু হয়ে যায় গ্রুপিং। মন্ত্রীর গ্রুপ বনাম সচিবের গ্রুপ। এই দুই গ্রুপের মাঝে ছোট্ট আরেকটি গ্রুপ আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। বিশেষত যেসব প্রতিষ্ঠানের প্রধানের মাথায় একটু বুদ্ধিসুদ্ধি এবং চরিত্রে সামান্যতম ব্যক্তিত্বের ছাপ রয়েছে, তারা মন্ত্রী-সচিবের বলয়ের বাইরে গিয়ে নিজের অনুগত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে স্বতন্ত্র একটি বলয় সৃষ্টি করে নিজেদের মতো কাজকর্ম করতে আরম্ভ করেন। সে মতে, শিক্ষাভবনেও বর্তমান ত্রিদলীয় ত্রিশঙ্কু অবস্থা বিরাজ করছে।
মন্ত্রণালয়, মন্ত্রী এবং সচিবের দ্বন্দ্ব এখন দেশবাসীর কাছে ওপেন সিক্রেট। পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনে মন্ত্রীর ছবি দেখলে এবং কথা শুনলে তার জন্য সত্যিই মায়া হয়। এর আগে একটি লেখায় লিখেছিলাম- নুরুল ইসলাম নাহিদ সৌভাগ্যবান, তিনি শুরু থেকেই সচিবালয়ের শ্রেষ্ঠ দু’জন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে তার সচিব হিসেবে পেয়েছেন। ফলে মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সাফল্যে তিনি উল্লাসে বগল বাজাতে বাজাতে একবারও ভাবেননি সাফল্যের কারিগর কে বা কারা? বর্তমান সচিবের পাল্লায় পড়ে তিনি নিশ্চয়ই তার অতীতের সেই দুই সফল কর্মকর্তাকে স্মরণ করেন এবং মনে মনে ভাবেন- ঢেঁকির তলে পড়ে চাল কিভাবে চিঁড়া হয় এবং যব কিভাবে ছাতু হয়।
মন্ত্রী-সচিবের দ্বন্দ্বে মন্ত্রণালয়জুড়ে চলছে হাহাকার। একে ঠিক অরাজকতা, অনিয়ম, বেলেল্লাপনা কিংবা অসদাচরণ বলা ঠিক হবে না। এই অবস্থাকে আসলে ঠিক কী বলা উচিত তা রীতিমতো গবেষণার বিষয়। বাংলাদেশের ভাষাবিজ্ঞানীরা এক হাজার মন নস্যি পেলে হয়তো তাদের গবেষণাকর্ম শুরু করতে পারতেন। আমরা ওই দিকে না গিয়ে বরং বাস্তব অবস্থা নিয়ে কিছু বলি।
মন্ত্রণালয়ের অবস্থা ত্রিশঙ্কু। এক দলে মন্ত্রী, অন্য দলে সচিব। মধ্যিখানে নিরপেক্ষ নিষ্কর্মার দল। দুই দলের গুঁতোগুঁতিতে তৃতীয় দলটি ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও কিছু করতে পারছে না। ফলে পুরো মন্ত্রণালয়ের কাজে নেমে এসেছে সীমাহীন স্থবিরতা। কেউ সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে না। মন্ত্রীর দল সর্বশক্তি নিয়ে চেষ্টা করছে সচিবের দলকে নাজেহাল করার। অন্য দিকে, সচিবও ছেড়ে দেয়ার পাত্র নন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও তিনি তার সামনের ও পেছনের তিন-চারটি ব্যাচের কর্মকর্তার ওপর ছড়ি ঘোরাতে ঘোরাতে রাজধানী ঢাকার প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ের রাজনীতিতে বর্তমানে এক নম্বর অবস্থানে আছেন। দীর্ঘ দিন আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক। বিরোধীদলীয় নেত্রী থাকাকালীন তার ব্যক্তিগত সচিব এবং আওয়ামী লীগের দুই মেয়াদের ক্ষমতাকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করার কল্যাণে তিনি প্রায় সব রাজনীতিবিদের ওজন, আকার ও আয়তন বুঝে গেছেন। ফলে আজীবন কমিউনিস্ট করা বাম ঘরানার রাজনীতিবিদ এবং হাল আমলের আওয়ামী লীগের নেতা যিনি সৎ, সজ্জন এবং ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত সেই নুরুল ইসলাম নাহিদ ইস্যু-বিসু-টিস্যু থেরাপির মাধ্যমে নাজেহাল করার কাজটি সচিব নামক লোকটি বেশ দক্ষতার সাথেই করে যাচ্ছেন। ফলে জাতির মেরুদণ্ড হিসেবে পরিচিত শিক্ষা নামের রত্নহারটি রক্তাক্ত হতে হতে প্রায় নির্জীব হতে বসেছে। এভাবে চললে রতœটি মার খাবে এবং মরা লাশের পুঞ্জীভূত গন্ধ পুরো জাতিকে ভোগ করতে হবে কাল থেকে কালান্তরে।
মন্ত্রণায়ের ত্রিশঙ্কু অবস্থায় শিক্ষাভবনে শুরু হয়েছে ত্রিমাত্রিক তেলেসমাতি। কে যে কখন কিভাবে কোন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তা শিক্ষাভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ভুক্তভোগীরা টেরই পাচ্ছেন না। আগের দুর্নীতি, অনিয়ম এখন স্থবিরতা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আগে টাকা দিলে কাজ হতো কিংবা কারো বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কারো কারো নালিশ করা যেত। বর্তমানে এসব হচ্ছে না। প্রথমত টাকা দিয়েও কাজ হচ্ছে না। কারণ একটি ফাইলকে শেষ পর্যন্ত অনুমোদিত হওয়ার জন্য অনেক টেবিলে ঘুরতে হয়। ফাইলটি যদি একটি গ্রুপে গৃহীত হয় তবে অপর গ্রুপ সেটিকে আটকে দেয়ার জন্য দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। আগে দুর্নীতির টাকা মন্দলোকেরা শালা-দুলাভাইয়ের মতো ভাগাভাগি করে নিতো। বর্তমানের ত্রিশঙ্কু অবস্থায়- কেউ কাউকে বিশ্বাস করেন না। ফলে ফাইল আটকে থাকে এবং নিত্যনতুন অদ্ভুত সব সিদ্ধান্ত নেয়া হয় কেবল প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে।
শিক্ষাভবনের সাথে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার, শিক্ষা কর্মচারী এবং সারা দেশে কর্মরত শিক্ষাভবনের অধীন মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারাও ইদানীং হাঁফিয়ে উঠেছেন। সকালে একটি সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয় থেকে এলো তো বিকেলেই সেটা আটকে গেল শিক্ষাভবনে এলে। অন্য দিকে, শিক্ষাভবনের কোনো গৃহীত সিদ্ধান্ত মাঠপর্যায়ে যাওয়ার আগেই মন্ত্রণালয় থেকে আটকে দেয়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ। তিনটি গ্রুপের সবাই বড় বড় তেলের ড্রাম মাথায় নিয়ে সরকার তোষণে দিনরাত ঘাম ঘরাচ্ছেন। নিজেদের অধিকতর সরকার সমর্থক প্রমাণের জন্য তারা নিত্যনতুন অভিনব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন এবং সেসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নতো করতে পারছেনই না বরং নিজেদের নানা রকম আইনি ঝামেলার মধ্যে জড়িয়ে ফেলছেন। একটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে।
আমার পরিচিত এক আইনজীবীর চেম্বারে দেখলাম বেশ কয়েকজন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক এসেছেন একটি আদালত অবমাননার মামলা করতে। শিক্ষকেরা সংখ্যায় ১৫-১৬ জন হবেন। তারা মামলা করতে এসেছেন কয়েক শ’ ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষকের পক্ষে। উকিল বললেন, মামলার বিবাদি কে হবেন? আইন মোতাবেক মাউশির অর্থাৎ শিক্ষাভবনের ডিজির বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে। কিন্তু শিক্ষকেরা কেবল ডিজিকে দায়ী করতে রাজি নন। তারা মন্ত্রী-সচিব এবং ডিজি এই তিনজনকে একত্রে বিবাদি করতে চান। এ নিয়ে আলোচনা করতে করতে শিক্ষকেরা একসময় হল্লা শুরু করলেন। তারা তাদের সহকর্মীদের ফোনে উকিলের পরামর্শের কথা জানালেন। এভাবে কিছুক্ষণ চলার পর উকিল বেশ বিরক্ত হয়ে তাদের চেম্বারের বাইরে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে আসতে বললেন।
শিক্ষকেরা বাইরে চলে যাওয়ার পর আমি বন্ধুবর উকিলকে বললাম, আচ্ছা, বলতো ব্যাপারখানা কী? বড়ই অদ্ভুত বলে মনে হচ্ছে! উকিল আমাকে যা জানালেন তার সারমর্ম হলো- সম্প্রতি শিক্ষাভবন থেকে একটি নির্দেশ জারি হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে- এখন থেকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে পূর্বেকার নিয়মের পরিবর্তে নতুন নিয়ম কার্যকর হবে। নতুন নিয়ম মতে, সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে যার বয়স সবচেয়ে বেশি তিনিই নতুন পদে অর্থাৎ সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি পাবেন। এমন একটি অদ্ভুত নির্দেশ পাওয়ার পর ভুক্তভোগীরা হতভম্ব হয়ে পড়েন। কারণ সেই ব্রিটিশ আমল থেকে সরকারি চাকরি বিধিতে সিনিয়রিটি ধার্য করার প্রথম ধাপ হলো চাকরিতে যোগদানের তারিখ। বাংলাদেশসহ তাবৎ দুনিয়ার সব সরকারি অফিসে চাকরিতে যোগদানের তারিখকে প্রাইমাফেসি করে তারপর অন্যান্য যোগ্যতা অর্থাৎ দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, আনুগত্য, সততা ইত্যাদির সমন্বয় করে কোনো কর্মকর্তাকে পদন্নোতি দেয়া হয়। শিক্ষাভবনের কর্মকর্তারা কোনো হালতে এবং কিসের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে এমন একটি অদ্ভুত সিদ্ধান্ত বিশেষ একটি শ্রেণী যাদের বলা হয় সমৃদ্ধ জাতি গড়ার কারিগর, তাদের হেয় প্রতিপন্ন এবং বিপন্ন করার মানসে নিলেন তা ভুক্তভোগীরা ভেবে পেলেন না।
দেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত হাজার হাজার শিক্ষক শিক্ষাভবনের অদ্ভুত অন্যায্য এবং বেআইনি সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর দিশেহারা হয়ে ছোটাছুটি শুরু করলেন। কিন্তু মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষাভবনের ত্রিশঙ্কু তেলেসমাতির কারণে কোনো পক্ষ থেকেই সামান্যতম সাহায্য-সহযোগিতা বা আশ্বাস পেলেন না। শিক্ষকদের মধ্যে প্রায় ২০০ জন সিনিয়র শিক্ষক, যারা কিনা গত পাঁচ-ছয় বছর যাবৎ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন এবং চাকরি বিধিমোতাবেক শতভাগ নিশ্চিত ছিলেন যে, তারাই সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পাবেন। এরা শিক্ষাভবনের নতুন নির্দেশে ভয়ানক অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়লেন। অসহায় শিক্ষকেরা কোনো কূলকিনারা না পেয়ে শেষমেশ উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হলেন।
হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে শিক্ষকদের দায়ের করা রিটটির যথারীতি শুনানি হলো। কোর্ট থেকে শিক্ষা সচিব এবং মাউশির ডিজিকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ জারি করা হলো। উকিলের ভাষ্য মতে- হাইকোর্টের রায়ে শিক্ষকদের জয়লাভের সম্ভাবনা শত ভাগ। এ দিকে শিক্ষভবনের চক্রটি বুঝতে পারে যে, এরা একটি ফাউল করে ফেলেছে। তাই এরা রুলের জবাব দিতে অহেতুক দেরি করছে এবং নিজেদের কৃত ভুলের দায় পাবলিক সার্ভিস কমিশনের ওপর চাপানোর চেষ্টা করছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ৩ আগস্ট একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সিনিয়র শিক্ষক-শিক্ষিকা পদটিকে প্রথম শ্রেণীর গেজেটেট পদে উন্নীত করে। ফলে তাদের পদোন্নতি সঙ্গত কারণেই পাবলিক সার্ভিস কমিশনে ন্যস্ত হয়ে যায়। এ অবস্থায় শিক্ষাভবনের চক্রটি তাদের এর আগে দেয়া পদোন্নতিসংক্রান্ত নির্দেশটি পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে আবারো জারি করানোর জন্য চেষ্টা-তদ্বির শুরু করে, যাতে করে শিক্ষকদের দায়েরকৃত রিটের দায় পিএসসির ঘাড়ে পড়ে।
নিরীহ শিক্ষকেরা কোর্ট কাচারিতে ঘুরতে ঘুরতে আইন-আদালত সম্পর্কে ইতোমধ্যে যথেষ্ট পরিপক্ব হয়ে উঠেছেন। আর সে জন্যই তারা তড়িঘড়ি করে আদালত অবমাননার মামলা দায়েরের জন্য উকিলের অফিসে এসেছেন। সব কিছু শোনার পর আমি শিক্ষাভবনের ত্রিশঙ্কু তেলেসমাতি অনুভব করার চেষ্টা করলাম এবং শিক্ষকদের মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকলাম- তারা কখন ছাত্রছাত্রীদের পড়ান এবং কিভাবে পড়ান? সূত্র: hardnews24.com

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335