শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০১:২১ পূর্বাহ্ন

বিএনপির সংলাপ নিয়ে শরিকদের ক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক: গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে জাতীয় ঐক্য গড়ার লক্ষ্যে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সংলাপ শুরু করেছিল বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে সংলাপ শুরু করলেও শেষ করতে পারেনি এখনও। অনেকদিন ধরে তাদের সংলাপের কার্যক্রম স্থবির থাকার পর গত ২১ জুলাই ডেমোক্রেটিক লীগ (ডিএল) ও সাম্যবাদী দলের সঙ্গে সংলাপ করে বিএনপি। ক্রমান্বয়ে সংলাপ অনুষ্ঠান না করায় বিএনপির এ উদ্যোগে শরিকদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির শরিক দলের এক শীর্ষ নেতা  বলেন, বিএনপির সংলাপে কোনো ক্রমধারা নেই। ওয়ানম্যান-ওয়ান পার্টি এমন দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছে আবার যাদের জেলা পর্যায়ে সাংগঠনিক অফিস রয়েছে তাদের সঙ্গেও করেছে। এখানে ক্রমান্বয়ের দরকার ছিল। বিএনপি সেটা না করার ফলে শরিকদের কয়েকটি দলের শীর্ষ নেতারা অস্বস্তিবোধ করেন। বিএনপির এটা বোঝা উচিত ছিল।

নির্বাচন থেকে দূরে সরতে সরতে জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দলের জায়গাটাও খুইয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। গত প্রায় ১৩ বছরে বেশি সময় বারবার আন্দোলন-সংগ্রামের ঘোষণা দিয়েও বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি দলটি। সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানান ছক কষলেও কোনো ছকই বাস্তবায়ন করতে পারছে না তারা।

দ্বিতীয় দফা বিএনপির সংলাপ যেদিন শুরু হয় ওইদিন তাদের দুই শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এলডিপি একাংশের মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, বিএনপি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছিল সেটা স্থগিত ছিল নতুন করে শুরু করছে কি না আমার জানা নেই।

সংলাপের আমন্ত্রণ পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখনও জানি না। আমাদের সঙ্গে এখন পর্যন্ত কেউ যোগাযোগ করেনি; আমাদের পক্ষ থেকেও কারও সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। শুনেছি ঈদের পর তারা সংলাপের উদ্যোগ নেবে, এখন পর্যন্ত কিছু জানি না।

দ্বিতীয় দফা সংলাপের বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা কিছু জানেন না। তিনিও সংলাপের আমন্ত্রণপত্র পাননি এখনো।

সংলাপ নিয়ে বিএনপিতে আশাবাদ তৈরি হয়েছিল তা এখন অনেকটাই ম্রিয়মাণ। অনেকেই মনে করছে পুরোনো মিত্রদের সাথে সংলাপের ফলাফল কী হবে? নতুন মাত্র দুটি দলের সাথে সংলাপ হয়েছে। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলন। সংলাপের অবস্থা দেখে মনে হয়েছে নতুন বোতলে পুরোনো মদ ।

প্রথম পর্যায়ে সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরসহ তিন দফা দাবি নিয়ে আপাতত ৩০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ হওয়ার কথা থাকলেও তা শেষ করতে পারেনি বিএনপি।

নির্বাচন থেকে দূরে সরতে সরতে জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দলের জায়গাটাও খুইয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। গত প্রায় ১৩ বছরের বেশি সময় বারবার আন্দোলন-সংগ্রামের ঘোষণা দিয়েও বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি দলটি। সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানান ছক কষলেও কোনো ছকই বাস্তবায়ন করতে পারছে না তারা।

পুরোনো মিত্রদের সঙ্গে সংলাপ শুরু করলেও মাঝপথে এসে থেমে গেছে সংলাপ। গত ২৩ মে স্থায়ী কমিটির সভায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের রূপরেখা প্রণয়নে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। সেই অনুযায়ী ২৪ মে প্রথম দিন নাগরিক ঐক্যের তোপখানা রোডের কার্যালয়ে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সংলাপ শুরু করে বিএনপি।

এরপর কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমেদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ লেবার পার্টি (একাংশ), জুনায়েদ সাকির নেতৃত্বাধীন গণসংহতি আন্দোলন, কমরেড সাইফুল হকের নেতৃত্বাধীন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ন্যাপ-ভাসানী (একাংশ), ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টি-এনপিপি (একাংশ) ও খন্দকার লুৎফর রহমানের নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা (একাংশ), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল’র সাথে সংলাপ শেষ করে বিএনপি।

গত ২২ জুন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি সভাপতির অসুস্থতার জন্য বিদেশযাত্রার কারণে এবং ২৭ জুন গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বিএনপির মহাসচিবের অসুস্থতাজনিত কারণে সংলাপ স্থগিত করা হয়।

বিএনপির এ উদ্যোগের পর থেকে মিত্রদের মধ্যে আগামী নির্বাচন ও সরকার গঠন নিয়ে বেশ আগ্রহ তৈরি হয়েছে বলে জানা যায়। তবে আগামী নির্বাচন ও তারেক রহমান ঘোষিত জাতীয় সরকার প্রসঙ্গে বিস্তারিত এখনো আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন বিএনপির শরিক দলগুলোর নেতারা।

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, সংলাপ নিয়ে বিএনপিতে আশাবাদ তৈরি হয়েছিল তা এখন অনেকটাই ম্রিয়মাণ। অনেকেই মনে করছে পুরেনো মিত্রদের সাথে সংলাপের ফলাফল কী হবে? নতুন মাত্র দুটি দলের সাথে সংলাপ হয়েছে। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলন। সংলাপের অবস্থা দেখে মনে হয়েছে নতুন বোতলে পুরোনো মদ ।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও বিএনপির এ সংলাপের সমালোচনা করে বলছে, গায়েবানা দলের সঙ্গে সংলাপ করছে বিএনপি। তারপরও বিএনপি নেতারা আশা প্রকাশ করেন, বিরোধী সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই সংলাপ করতে চান তারা। বিএনপির দাবির সঙ্গে কারও আপত্তি থাকলে তাতেও দেওয়া হতে পারে ‘ছাড়’। পাশাপাশি অন্যান্য দলের যৌক্তিক দাবি থাকলে সেগুলোও রূপরেখায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এভাবেই আলোচনার ভিত্তিতে আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি করা হবে।

দ্বিতীয় দফা সংলাপ শুরুর প্রথম দিন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম এতদিন বন্ধ ছিল, এখন চালু হয়েছে। শিগগির আমাদের এই সংলাপ সম্পন্ন করব।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335