বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৪৩ পূর্বাহ্ন

বগুড়ায় বন্ধুকে খুন করে মোবাইল বিক্রি, সেই টাকায় বান্ধবীর সঙ্গে হোটেলে !!

এম,এ রাশেদ,বগুড়া জেলা প্রতিনিধিঃ
মোবাইল ফোনের জন্যই সপ্তম শ্রেণির কিশোর নওফেল (১৪) কে খুন করে তারই বন্ধু। খুনের অভিযোগে নওফেলের বন্ধুকে গ্রেপ্তারের পর এসব বিষয় জানতে পারে পুলিশ। মঙ্গলবার (২৮ জুন) বেলা ১২টার দিকে পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী তার নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস কনফারেন্সে এসব কথা জানান। গত ২০ জুন সন্ধ্যায় বগুড়ার শাজাহানপুরের দাড়িগাছা ফুলবাড়িয়া এলাকায় নওফেল শেখের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার হয়। এর আগে ১৮ জুন থেকে সে নিখোঁজ ছিল। নিহত নওফেল একই এলাকার ইসরাইল শেখের ছেলে এবং দাড়িগাছা ইসলামী উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। মরদেহ উদ্ধারের পরপরই পুলিশ তদন্তে নামে। তদন্তে তার বন্ধুর সংশ্লিষ্টতা বেরিয়ে আসে। পরে ২৭ জুন দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকার টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকা থেকে অভিযুক্ত ওই কিশোরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত থাকায় জাকিয়া খাতুন বৃষ্টি (২০) নামে এক তরুণীও গ্রেপ্তার করা হয়। জাকিয়া বগুড়ার শেরপুরের বাসিন্দা। জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার বলেন, ১৮ জুন নওফেলের জন্মদিন ছিল। ওই দিন তার বাবা ইসরাইল ১৮ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি স্মার্টফোন উপহার দেন। সেই মোবাইল নিয়ে নওফেল ওই ঘনিষ্ট বন্ধুর সাথে বাড়ি থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে একটি জঙ্গলে যায়। মূলত এ জঙ্গলে এসে তারা ধূমপান করত। পুলিশ সুপার জানান, এ সময় অভিযুক্ত কিশোর পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক সঙ্গে একটি মাফলার নিয়েছিল। জঙ্গলে গিয়ে ধুমপানের ফাঁকে মাফলার গলায় প্যাচাঁনো গল্প তুলে এই কিশোর। কিন্তু বন্ধু হওয়ার কারণে নওফেল এসবের কারণ বুঝতে পারেনি। এরই এক পর্যায়ে নওফেলের গলায় মাফলার দিয়ে প্যাঁচ দিয়ে পেছন থেকে টান দেয়। এতে কিছুক্ষণ ছটফট করে নওফেল মারা যায়। পরে পাশে থাকা একটি বাঁশ দিয়ে মাথায় পরপর দুবার আঘাত করে অভিযুক্ত। মৃত্যু নিশ্চিত হলে সেখানে আরও প্রায় ১৫ হাত দূরে ঝোপের ভিতরে নওফেলের মরদেহ টেনে নিয়ে গিয়ে গুম করে। পরবর্তীতে মরদেহটি উদ্ধার হলে ওই কিশোর সবার অগোচরে পালিয়ে যায়। পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত কিশোরের মোবাইল হাতানোর উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন কারণে। তার এক বান্ধবীর সঙ্গে শারিরীক সম্পর্কের জন্য অর্থের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তার কাছে দ্রুত এ টাকা যোগাড় করতে পারেনি অভিযুক্ত ছেলেটি। এ জন্য এই পথ বেছে নেয়। মোবাইল বিক্রির সূত্র ধরে জাকিয়া খাতুন বৃষ্টি নামে ওই তরুণীকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এসপি সুদীপ কুমার বলেন, নওফেলের মোবাইলটি হাতিয়ে নিয়ে অভিযুক্ত কিশোর জাকিয়া খাতুনের সঙ্গে দেখা করে। পরে তারা দুজনে শহরের সাতমাথায় একটি দোকানে গিয়ে ওই মোবাইল ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে। বিক্রির টাকা নিয়ে তারা দুজনে শহরের গালাপট্টিস্থ হোটেল টুইন ব্রাদার্সে রুম ভাড়া করে সময় কাটায়। ওই কিশোরের আরেক বন্ধুও সেখানে এসে মেয়েটির সঙ্গে সময় কাটায়। পরে মেয়েটিকে দেড় হাজার টাকা দিয়ে অভিযুক্ত কিশোর চলে যায়। জেলা পুলিশ সুপার জানান, তদন্তে প্রথমে মোবাইল উদ্ধার করা হয়। সেই সূত্র ধরে মেয়েটিকে এবং পরে টঙ্গী থেকে অভিযুক্ত কিশোরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার কিশোরের দেখানো স্থান থেকে হত্যায় ব্যবহৃত মাফলারও উদ্ধার করা হয়েছে। সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, গ্রেপ্তার নারী কারাগারে রয়েছে। আর অভিযুক্ত কিশোরকে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রেস কনফারেন্সে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আব্দুর রশিদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোতাহার হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) হেলেনা খাতুন এবং শাজাহানপুর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন উপস্থিত ছিলেন।।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335