মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০১:২৮ অপরাহ্ন

ঘর আছে, গৃহস্থালি নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘ঘর-গৃহস্থালি করেই সারা জীবন কাটলো। এখন পাকা ঘর আছে কিন্তু গৃহস্থালি নেই। সকালে চারটা লেবু কিনেছি ২০ টাকায়। শাকপাতা যাই খাই, সবই কেনা। টাকা থাকে না, আসে আর যায়।’

মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কুমারভোগ পুনর্বাসন কেন্দ্রে এসব কথা বলেন ষাটোর্ধ্ব সালাম মিয়া। মাওয়া চৌরাস্তায় নিজের ৯ শতক বসতি পদ্মা সেতু প্রকল্পে দিয়েছেন তিনি। সে সময় (২০১৬ সাল) তিনি পেয়েছিলেন সাড়ে ১৫ লাখ টাকা আর এ পুনর্বাসন কেন্দ্রে ৫ শতক জমি।

পুনর্বাসন কেন্দ্রের ভেতরে সবারই মাত্র ৫ শতক করে জমি। সেজন্য সেখানে গরু-ছাগল পালা যায় না। গাছপালাও লাগানো যায় না। জমি দেওয়ার সময় সেটা নিষেধও করা আছে। সরকার কিছু ফলের গাছ লাগাইছে। সে ফল পাওয়া যায় না।

তিনি বলেন, ওই সময় যে টাকা পাইছি, এর মধ্যে নতুন ঘর তুলছি। ছোট পোলায় টং দোকান তুলছে। বাকিটা ব্যাংকে। সেখান থেকে যা পাই (লভ্যাংশ), তাই দিয়ে চলি।

‘কিন্তু দিন দিন খরচ যেভাবে বাড়ছে, তাতে এখন আর পোষায় না। যদি কোনো গৃহস্থালি কাজের ব্যবস্থা থাকতো, দু-একটা গাছ লাগাতাম, গরু-ছাগল পালতাম। তাহলে ভালো হতো। কিছু খরচ পোষাতো।’

তিনি বলেন, ‘এখানে আসার পরে একদম ভদ্রলোক হয়ে গেছি। খাই আর সারাদিন বসে কাটাই। পাকা রাস্তায় চলি, বড় মসজিদে নামাজে যাই। তারপরও গৃহস্থালির নেশা কাটে না। চাষবাস করা ও মাছ ধরার নেশায় পায়।’

সালাম মিয়া বলেন, আশপাশে ফসলি জমি কমে যাওয়ায় বর্গা জমির খরচও প্রচুর। সেভাবে জমি নিয়ে চাষ করলেও লাভ নেই। এদিকের প্রায় সব ফসলি জমি পদ্মার প্রকল্পে নিয়ে গেছে, যা আছে সেখানে দোকানপাট আর বিল্ডিং উঠছে। উন্নয়নের কারণে জমির দাম খুব বেড়েছে।

অন্য যে কোনো বাজারের থেকে এখানে জিনিসপত্রের দাম বেশি। শাক-সবজি, মাছ-মাংস বড় বড় রেস্টুরেন্ট আর সেতুতে কাজ করা লোকজন চড়া দামে কেনেন। সেজন্য এলাকার মানুষকেও বেশি দাম গুনতে হয়।

তিনি বলেন, পুনর্বাসন কেন্দ্রের ভেতরে সবারই মাত্র ৫ শতক করে জমি। সেজন্য সেখানে গরু-ছাগল পালা যায় না। গাছপালাও লাগানো যায় না। জমি দেওয়ার সময় সেটা নিষেধও করা আছে। সরকার কিছু ফলের গাছ লাগাইছে। সে ফল পাওয়া যায় না।

পুনর্বাসন কেন্দ্রে উন্নত জীবন হলেও সালাম মিয়ার মতো এমন আক্ষেপ রয়েছে অনেকেরই। অনেকেই বলেছেন, এখানে রাস্তাঘাট, পানি, বিদ্যুৎ, পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থাও ভালো। শহরের মতো পরিবেশ। তবে পর্যাপ্ত জায়গা নেই। বসতবাড়িতে চাষাবাদ বা পশুপালনের সুবিধা না থাকায় অনেকে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়ছেন। নারীদেরও গৃহস্থালি কর্মকাণ্ড কমেছে। সংসারে আগের মতো ভূমিকা রাখতে পারছেন না তারা।

একই অবস্থা পাশের যশলদিয়া পুনর্বাসন কেন্দ্রে এবং পদ্মার ওপাড়ে নাওডোবা পুনর্বাসন কেন্দ্রের মানুষেরও।

যশলদিয়া কেন্দ্রের মাহমুদা বেগম বলেন, আগে নিজের ঘরের কোণে শাক-সবজি চাষ, গরু, ছাগল ও মুরগি পালন করতাম। ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচ সেখান থেকেই আসতো। কখনও স্বামীর টাকা নেইনি, বরং সবসময় তাকে সাহায্য করেছি।

তিনি বলেন, এখানে পশুপালন করা যায় না। পাশাপাশি ঘর হওয়ায় অন্যের সমস্যা হয়। হাঁস-মুরগিও অন্যের ঘরে গেলে ঝগড়া বাধে।

আরেক নারী সাবিনা বলেন, রাস্তার পাশে খালি জায়গায় লাউয়ের একটা জালঙ্গা দিয়েছিলাম। সভাপতি এসে নিষেধ করেছেন। পরে লাউ পাইনি। কে যেন সব নিয়ে গেছে।

এদিকে পুনর্বাসন কেন্দ্রে জীবনধারণের ব্যয় অনেক বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সবাই। ফরিদউদ্দিন নামের একজন বলেন, অন্য যে কোনো বাজারের থেকে এখানে জিনিসপত্রের দাম বেশি। শাক-সবজি, মাছ-মাংস বড় বড় রেস্টুরেন্ট আর সেতুতে কাজ করা লোকজন চড়া দামে কেনে। সেজন্য এলাকার মানুষকেও বেশি দাম গুনতে হয়।

তিনি আরও বলেন, এখানে ভ্যান-রিকশা বা অটোর ভাড়াও অনেক বেশি। কারণ প্রচুর পর্যটক আসে যারা বেশি খরচে ঘোরাফেরা করেন। সে প্রভাব পড়ে স্থানীয় মানুষের ওপরেও।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335