শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০১:৩৩ পূর্বাহ্ন

মোট জনসংখ্যার ২.৮ শতাংশ প্রতিবন্ধী

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের মোট জনসংখ্যার ২ দশমিক ৮০ শতাংশই মানসিক বা শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধীর হার বেশি গ্রামে। লিঙ্গ বিভাজনে নারীদের চেয়ে প্রতিবন্ধী বেশি পুরুষরা। সারাদেশে শহর ও গ্রামের ৩৬ হাজার খানার ওপর জরিপ চালিয়ে এমনই তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।

গত বছরের ১ নভেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিচালিত জরিপের প্রতিবেদন সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জাতীয় প্রতিবন্ধী জরিপ করেছে বিবিএস। আমি আশা করি জরিপটি জনপ্রতিনিধি, নীতিনির্ধারকদের মানসম্পন্ন তথ্য সরবরাহ করবে। পরিকল্পনাবিদ, গবেষক, উন্নয়ন সহযোগী এবং অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি ব্যক্তিদের এটা কাজে লাগবে। দেশে প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে পরিকল্পনা, কর্মসূচি এবং কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য সংস্থাগুলোকে এই জরিপ নানাভাবে সহায়তা করবে।

‘জাতীয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি জরিপ-২০২১’ শীর্ষক এ জরিপের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোট জনসংখ্যার ২ দশমিক ৮০ শতাংশ প্রতিবন্ধী হলেও লিঙ্গভেদে পুরুষ প্রতিবন্ধী ৩ দশমিক ২৯ এবং নারী প্রতিবন্ধী ২ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

‘জাতীয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি জরিপ-২০২১’ প্রকল্প পরিচালক ইফতেখাইরুল করিম  বলেন, বাংলাদেশে এবারই প্রথম প্রতিবন্ধী জরিপ প্রকাশ করেছে বিবিএস। আমরা সারাদেশে ৩৬ হাজার খানা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে জরিপের ফলাফল তৈরি করেছি।

জরিপ অনুসারে, শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামে প্রতিবন্ধী বেশি। এই হার গ্রামে ২ দশমিক ৯২ এবং শহরে ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ার ঝুঁকি। শূন্য দশমিক ৪ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রতিবন্ধিতার হার শূন্য দশমিক ৮৭ শতাংশ। অন্যদিকে ৬৫ বছর বয়সীদের মধ্যে প্রতিবন্ধিতার হার ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকাংশই মূলধারার জাতীয় উন্নয়ন থেকে বাদ পড়েন। নেতিবাচক মনোভাব এবং দারিদ্র্যের মাধ্যমে বেড়ে ওঠায় নানা ধরনের বঞ্চনার শিকার হন তারা। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে ভিক্ষাবৃত্তিও বেছে নেন। ভালো ও সুস্থ পরিবেশে বেড়ে ওঠা প্রতিবন্ধী ব্যক্তির কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হলে তারা দারুণ অবদান রাখেন। তারা দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তা করতে পারেন।

শিশু প্রতিবন্ধীদের মধ্যে ৪০ দশমিক ৫৫ শতাংশ প্রাথমিক শিক্ষা পায় আর ২৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ মাধ্যমিক শিক্ষা পায়।

জরিপ মতে, শারীরিক প্রতিবন্ধিতার হার সবচেয়ে বেশি ১ দশমিক ১৯ শতাংশ। বাকিগুলোর মধ্যে রয়েছে অটিজম বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার শূন্য দশমিক শূন্য ৪, মানসিক অসুস্থতা শূন্য দশমিক ২৪, দৃষ্টিশক্তি প্রতিবন্ধী শূন্য দশমিক ৩৯, বাকপ্রতিবন্ধী শূন্য দশমিক ১১, বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিবন্ধী শূন্য দশমিক ১৪, শ্রবণ প্রতিবন্ধী শূন্য দশমিক ১৯, সেরিব্রাল পালসি শূন্য দশমিক শূন্য ৬, ডাউন সিনড্রোমের প্রতিবন্ধী শূন্য দশমিক ০০৩ শতাংশ, বধির-অন্ধত্ব শূন্য দশমিক ১০, একাধিক প্রতিবন্ধিতা শূন্য দশমিক ২৬ এবং অন্যান্য অক্ষমতা শূন্য দশমিক ০৫ শতাংশ।

প্রতিবন্ধিতার হারের দিক থেকে বেশি খুলনা বিভাগে ৩ দশমিক ৬১ শতাংশ, কম সিলেটে ২ দশমিক ২৮ শতাংশ। এছাড়া রংপুরে ৩ দশমিক ৫৪, রাজশাহীতে ৩ দশমিক ৩৫, বরিশালে ২ দশমিক ৪৪, চট্টগ্রামে ২ দশমিক ৪১ এবং ঢাকায় ২ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

খুলনায় পুরুষ সর্বোচ্চ সংখ্যক হারে প্রতিবন্ধী ৪ দশমিক ২৭ শতাংশ, রংপুরে এ হার ৪ দশমিক ০৯ শতাংশ। এর অর্থ খুলনায় ১০০ জন পুরুষের মধ্যে ৪ দশমিক ২৭ জন প্রতিবন্ধী, রংপুরে ৪ দশমিক ০৯ জন। সিলেটে পুরুষ প্রতিবন্ধীর হার ২ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

অন্যদিকে নারী প্রতিবন্ধীর হার বেশি রংপুরে ২ দশমিক ৯৮, রাজশাহীতে ২ দশমিক ৯৫ শতাংশ। নারী প্রতিবন্ধীর হার কম সিলেটে ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

জরিপের আগের তিন মাসে ৬১ দশমিক ৬৫ শতাংশ প্রতিবন্ধী সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা পেয়েছেন। এদের মধ্যে ২৬ শতাংশ পেয়েছেন সরকারি হাসপাতালের সেবা, ৭১ দশমিক ৬০ শতাংশ পেয়েছেন বেসরকারি হাসপাতালের সেবা, এছাড়া এনজিও পরিচালিত হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা পেয়েছেন শূন্য দশমিক ৩১ শতাংশ। মাত্র ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ প্রতিবন্ধী বাড়িতে নিজেদের চাহিদা অনুসারে স্যানিটেশন সুবিধা পান।

যথাযথ কর্তৃপক্ষের সনদ ও নিবন্ধন আছে মাত্র ৩১ দশমিক ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধীর। ৩৩ শতাংশ প্রতিবন্ধী পান তাদের ভাতা।

জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকাংশই মূলধারার জাতীয় উন্নয়ন থেকে বাদ পড়েন। নেতিবাচক মনোভাব এবং দারিদ্র্যের মাধ্যমে বেড়ে ওঠায় নানা ধরনের বঞ্চনার শিকার হন তারা। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে ভিক্ষাবৃত্তিও বেছে নেন। ভালো ও সুস্থ পরিবেশে বেড়ে ওঠা প্রতিবন্ধী ব্যক্তির কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হলে  তারা দারুণ অবদান রাখেন। তারা দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তা করতে পারেন। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে ২৭ দশমিক ২১ শতাংশ কর্মরত। কর্মরত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের  বেশিরভাগই গ্রাম এলাকায় থাকেন।

বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জাতীয় প্রতিবন্ধী জরিপ করেছে বিবিএস। আমি আশা করি জরিপটি জনপ্রতিনিধি, নীতিনির্ধারকদের মানসম্পন্ন তথ্য সরবরাহ করবে। পরিকল্পনাবিদ, গবেষক, উন্নয়ন সহযোগী এবং অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি ব্যক্তিদের এটা কাজে লাগবে। দেশে প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে পরিকল্পনা, কর্মসূচি এবং কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য সংস্থাগুলোকে এই জরিপ নানাভাবে সহায়তা করবে। কাউকে পেছনে ফেলে রেখে আমাদের সরকার উন্নয়ন করছে না। উন্নয়নের কাতারে সবাইকে শামিল করতেই এই জরিপ।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335