বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:০১ অপরাহ্ন
শাজাহানপুর, (বগুড়া) প্রতিনিধি ঃ বগুড়ার শাজাহানপুরে চাঁদা না পেয়ে মিজানুর রহমান (৩৪) নামের এক ব্যক্তির মুদি দোকান ভাংচুর-লুটপাট ও মারপিটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার গোহাইল ইউনিয়নের পোয়ালগাছায় গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় মিজানুর রহমান বাদি হয়ে থানায় এজাহার দায়ের করেছেন।
এজাহার সূত্রে জানাযায়, উপজেলার পোয়ালগাছা দক্ষিন পাড়া গ্রামের আজিমুদ্দিন প্রামানিকের পুত্র মিজানুর রহমানের (৩৫) স্ত্রী শামীমা বেগম (২৫) তার বাবার একমাত্র সন্তান হওয়ায় সম্পত্তির লোভে তার জ্যাডাতো ভাই শ্যামল (২৮) শামীমাকে বিয়ে করতে উঠে পড়ে লাগে। কিন্তু শ্যামল বখাটে স্বভারের হওয়া শামীমার বাবা-মা তার সাথে বিয়ে না দিয়ে মিজানুর রহমানের সাথে বিয়ে দেয়। এতে করে বিয়ে দেয়ার পর থেকেই শ্যামল মিজানুর রহমানের উপর ক্ষিপ্ত হতে থাকে। এরপর স্ত্রী শামীমা বেগম নিজ নামীয় ৮ শতক জমি স্বামী মিজানুর রহমানের নামে লিখে দিলে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে শ্যামল। স্ত্রীর লিখে দেয়া পোয়ালগাছা উত্তরপাড়ায় জামাদারপুকুর হতে গাড়িদহ সড়ক সংলগ্ন ওই ৮ শতক জমিতে ৫ তলা ফাউন্ডেশনের ১তলা বিশিষ্ট বসতবাড়ি নির্মাণ করে বসবাসের পাশাপাশি খুচরা ও পাইকাড়ী মুদি দোকান চালিয়ে আসছে।
গত এক সপ্তাহ পূর্বে শ্যামল তার দলবল সহ মিজানুর রহমানের দোকানের সামনে এসে শামীমাকে তালাক দিয়ে এলাকা থেকে চলে যেতে বলে। এবং বলে এখানে ব্যবসা করতে গেলে ১ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি দিতে হবে। এরই জের ধরে মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে শ্যামল তার দলবল সহ দেশীয় অস্ত্রে-স্বত্রে সজ্জিত হয়ে মিজানুর রহমানকে মারপিট করে শয়ন ঘরের থাই গ্লাস, দোকানে থাকা কম্পিউটার, মিটার স্কেল, কাঁচের র্যাক ভাংচুর সহ মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। যার ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। এবং ক্যাশ ড্রয়ারে থাকা লক্ষাধিক টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
মারপিটে আহত মিজানুর (৩৫) ও তার স্ত্রী শামীমা আকতার ( ২৫) বগুড়া মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ঘটনায় মিজানুর রহমান বাদি হয়ে পোয়াগাছা গ্রামের জেলহজ সরকারের পুত্র শ্যামল (২৮), মৃত লালমন সরকারের দু’পুত্র নজরুল (৩০), সাজু (২৬) সহ অজ্ঞাতনামা ৩ জনের নামে শাজাহানপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
মিজানুর রহমান জানান, শ্যামল সম্পত্তির লোভে তার শশুড়-শাশুড়ীকে বিভিন্ন ভাবে প্রলোভিত করে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার ষড়যন্ত্র করে আসছিল। ভাই-ভাতিজাদের শলা-পরামর্শে প্রলোভিত হয়ে শশুড়-শাশুড়ী মেয়ে-জামাইয়ের সাথে প্রায়ই ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকতো। এবং স্বামীকে তালাক দিয়ে জ্যাঠাতো ভাই শ্যামলকে বিয়ে করতে মেয়েকে চাপ সৃষ্টি করতো এবং প্রায়ই মারধর করতো।
এমতাবস্থায় মিজানুর রহমান ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ দায়ের করলে ইউপি চেয়ারম্যান আলী আতোয়ার তালুকদার ফজু মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে উভয় পক্ষকে শান্তিপূর্ণ বসবাস করতে অনুরোধ জানিয়ে আসেন।
মাহমুদ আলী ও মোজাফ্ফর রহমান সহ স্থানীয়রা জানান, চেয়ারম্যান সাহেব চলে আসার পরপরই মিজানুরের শশুড় ও তার শশুড়ের ভাই-ভাতিজারা লাঠিসোটা নিয়ে এসে মিজানুর ও তার স্ত্রী শামীমা বেগম, ভাই জাহাঙ্গীর আলমকে মারপিট ও দোকান ভাংচুর শুরু করে। শফিকুর রহমানের পুত্র সন্তান না থাকায় তার সম্পত্তির একটি অংশ তার ভাই-ভাতিজারা পাওয়ার কথা। কিন্তু মেয়ে ও নাতিকে দলিল করে দেয়ায় জমি হাত ছাড়া হয়ে যাওয়ার জের ধরেই শফিকুর রহমানকে প্রলোভিত করে তার ভাই-ভাতিজারা মিজানুর রহমান ও তার দোকানে হামলা-ভাংচুর করেছে বলেও জানান তারা।
ইউপি চেয়ারম্যান আলী আতোয়ার তালুকদার ফজু জানান, যেহেতু শফিকুর রহমান তার মেয়ে ও নাতির নামে জমি দলিল করে দিয়েছে সেহেতু আইনত মেয়ে ও জামাইকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার ইখতেয়ার তার নেই। উল্টো মেয়ে-জামাই যদি তাদেরকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় তাতে আইনত কোন বাধা থাকার কথা না। তারপরও এলাকার শান্তি-শৃংখলা রক্ষার স্বার্থে উভয়কে শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করতে বলা হয়েছে। এরপরও অন্যায় ভাবে চাঁদার দাবীতে মারপিট ও দোকান ভাংচুর-লুটপাটের ঘটনা দুঃখ জনক।
থানার সেকেন্ড অফিসাস এসআই এনায়েত অভিযোগ দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, অভিযোগ হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।