শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০২:৫৭ অপরাহ্ন

 পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১২ কোটি টাকা নদীতে ভাসছে!

সুজন মোল্লা,বানারীপাড়া (বরিশাল)প্রতিনিধি: বরিশালের উজিরপুরে সন্ধ্যা নদীর ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১২ কোটি টাকার প্রকল্প ভাসছে নদীতে। বরাদ্দ না পাওয়াকে দুষছেন কর্মকর্তারা। অর্ধশত কোটি টাকার সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাসহ যেকোন মূহুর্তে বিলিন হতে পারে উজিরপুর-সাতলা সড়ক। ইতিমধ্যে সন্ধ্যা নদীর করাল গ্রাসে কয়েকশত পরিবার বাড়ী ঘর হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

সূত্রে জানা যায়- সন্ধ্যা নদীর ভাঙন রোধকল্পে ১ বছর মেয়াদে ২ কিলোমিটার  দৈর্ঘ্য ২শত মিটার প্রস্থ ১২ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সে অনুযায়ী ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নদীর ¯্রােতধারা পরিবর্তনের জন্য সন্ধ্যা নদীর লস্করপুর নামক স্থানে খুলনা ড্রেজার ডিভিশনের মাধ্যমে ড্রেজিং কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মোঃ শাহে আলম।

কিন্তু প্রায় ১ বছর অতিবাহিত হলেও ওই কাজের ৩ ভাগের ১ভাগও কাজ সমাপ্ত করতে পারেনি ওই প্রকল্প। তবে সময়মত বরাদ্দ না পাওয়ায় কার্যক্রম সঠিক সময়ে সম্পাদন করতে পারছেন না বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনা ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্বে) আঃ ছালাম ও উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ গোলাম নবী। তারা আরো জানান, এ যাবৎ মাত্র ২ কোটি টাকা বরাদ্দ আসে সে অনুযায়ী কার্যক্রম চলছে।

খনন কার্যে নিয়োজিত ড্রেজার ডিভিশনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আতিকুর রহমান জানান এ পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ৫০ মিটার প্রস্থ খনন কার্য শেষের পথে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কার্যক্রম কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে। বড়াকোঠা ইউপি চেয়ারম্যান এ্যাড: শহিদুল ইসলাম জানান ড্রেজিং কার্যক্রমের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অলস সময় পার করছেন। এভাবে চলতে থাকলে ৩ বছরেও এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে না।

অব্যাহত ভাঙনে চথলবাড়ী মডেল বাজার, তিনতলা বিশিষ্ট আঃ মজিদ বহুমুখি মাধ্যমিক বিদ্যালয়,চতলবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,২তলা বিশিষ্ট ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপে¬ক্স, পোষ্ট অফিস, নারিকেলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩টি মসজিদ ও নবনির্মিত উজিরপুর-সাতলা সড়ক সহ প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার স্থাপনা যে কোন মূহুর্তে বিলীন হয়ে যেতে পারে। সঠিক সময়ে উদ্যোগ না নিলে উজিরপুরের সাথে পশ্চিম অঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে নারিকেলী, চাউলাহার, সাকরাল, লস্করপুর, চথলবাড়ী, মালিকান্দাসহ কয়েকশত পরিবারের ঘরবাড়ী নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

স্থানীয়রা আরো জানান, ড্রেজার কার্যক্রমের যেটুকু সরকারের বরাদ্দ হয়েছে তাও সঠিকভাবে করছেনা কর্তৃপক্ষ। নদীর বালু কেটে কোথায় রাখেন স্থানীয়রা জানেন না আবার অভিযোগ রয়েছে কিছু কিছু বালু রাতের আধারে অবৈধভাবে বিক্রি করছেন ড্রেজার কর্তৃপক্ষ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,সন্ধ্যা নদীর লস্করপুর এলাকায় বড় আকারে একটি ড্রেজার, পাশেই একটি আবাসিক লঞ্চ পানিতে ভাসছে।

সারি, সারি ড্রেজিং কার্যক্রমের যন্ত্রপাতি, পাইপ পড়ে আছে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ওই সময় কার্যক্রম বন্ধ ছিল। স্থানীয়রা আরো জানান,ওই প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নদীর মধ্যে অলস সময় পার করছেন। ভাঙ্গল কবলিত মানুষেরা জীবন জীবিকার তাগিদে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) দিপক রঞ্জন দাস জানান,  তিনি নতুন দায়িত্ব নিয়েছেন। বিষয়টি জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নয় জনকে চৌদ্দ হাজার মিটার নিষিদ্ধ জালসহ গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৮

সুজন মোল্লা,বানারীপাড়া (বরিশাল)প্রতিনিধি: প্রায় ১ লাখ ৫৭ হাজার টাকা মূল্যের ১৪ হাজার ১৩০ মিটার অবৈধ ও নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়েছে। কেনা-বেচার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বরিশালের উজিরপুর থেকে ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান র‌্যাব-৮। ২০ আগস্ট বৃহস্পতিবার দুপুরে র‌্যাবের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করা হয়েছে।

এর আগে সকালে র‌্যাব-৮ এর সিপিএসসির ডিএডি মো. আব্বাস উদ্দিন বাদী হয়ে উজিরপুর মডেল থানায় সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। র‌্যাবের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ১৯ আগস্ট বৃহস্পতিবার রাতে র‌্যাব-৮ এর সিপিএসসি বিশেষ একটি দল নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল কেনাবেচার গোপন সংবাদে উজিরপুর উপজেলার হারতা বাজারে অভিযান চালায়।

এ সময় কারেন্ট জাল ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত ৯ জনকে গ্রেফতার করেন র‌্যাব সদস্যরা। গ্রেফতাররা হলো-গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া থানাধীন হরিণাহাটি এলাকার মো. ফারুক গাজী (৫৫), হারুন অর রশিদ (৫৮), আ. ছালাম গাজী (৫৫), আ. মজিদ সর্দার (৬২), উত্তরপাড় এলাকার মো. ওসমান তালুকাদার (৫০), সীতাইকুন্ড এলাকার মো. আতাউর কাজী (৫৭), বরিশালের উজিরপুর উপজেলার হারতা এলাকার শামসুল হক বাহাদুর (৫২), দীপক রায় (৪০) এবং যুগিরকান্দা এলাকার অরুণ দাস (৩৫)।  বিজ্ঞপ্তিতে র‌্যাব আরও জানায়,গ্রেফতারদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী স্থানীয় একটি টিনশেডের দোকান থেকে ৯টি প¬াস্টিকের বস্তা ভর্তি ১৫৭ কেজি ওজনের ১৪ হাজার ১৩০ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়।

৩৫ বছর পেরিয়ে গেলেও ন্নয়ন হয়নি রাস্তার

সুজন মোল্লা,বানারীপাড়া (বরিশাল)প্রতিনিধি: বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলা ও নিভৃত গ্রামাঞ্চলে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ চালিয়ে গেলেও তা থেকে অনেকাংশে বঞ্চিত রয়েছে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার প্রত্যন্ত ইউনিয়ন হারতা। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার পশ্চিমে এই ইউনিয়নের অবস্থান।

কৃষি পণ্য ও মৎস্য ব্যবসার জন্য সমৃদ্ধ হারতা বাজার উপজেলার সবচেয়ে বড় পাইকারী-খুচরা পণ্য বেচাকেনার বাজার। তবে এখানকার মানুষের ভোগান্তির আরেক নাম হচ্ছে চল্লিশ বছরের পুরনো হারতা-জল্লা আঞ্চলিক রাস্তাটি। প্রায় ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ ইট বিছানো রাস্তাটি এখন পুরোপুরি কাঁদা-মাটির রাস্তা। মাঝে মধ্যে রাস্তাটির কোথাও কোথাও দু’একটি ইটের দেখা মেলে। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি সংস্কারের জন্য এলাকাবাসী স্থানীয়

জনপ্রতিনিধিদের অবগত করলেও তাতে কোন সুফল হয়নি।  সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হারতা থেকে জল্লা যাওয়ার ওই আঞ্চলিক রাস্তাটির ইট উঠে পুরো কাঁদা-মাটির রাস্তায় পরিণত হয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে পুরো রাস্তাটি কাঁদা-পানিতে একাকার হয়ে বেহাল দশার সৃষ্টি হয়েছে। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি কোন এক সময় ইট বিছানো রাস্তা ছিল। রাস্তার এই বেহাল অবস্থার কারণে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রাস্তাটি ব্যবহার করে চলাচলকারী জল্লা ও হারতা ইউনিয়নের কয়েক হাজার বাসিন্দাদের। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ১৯৮০ সালের দিকে স্থানীয় সরকার

প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) এই রাস্তাটি নির্মাণ করে। নির্মাণের কয়েক বছর পর থেকেই রাস্তাটি চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়লেও এখন পর্যন্ত কোন সংস্কার করা হয়নি। অথচ রাস্তাটি ব্যবহার করেই স্থানীয়রা যাতায়াতের পাশাপাশি প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার কৃষি পণ্য ও মৎস্য সম্পদ জেলার বিভিন্নস্থানে পরিবহনযোগে সরবরাহ করে আসছেন। সেক্ষেত্রে দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরেই প্রতিনিয়ত তাদের পোহাতে হচ্ছে অন্তহীন ভোগান্তি। তাছাড়া

রাস্তার এই দুরাবস্থার কারণে আশপাশের গ্রামগুলোর সাথে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। কিন্তু এ দুর্ভোগ দেখার কেউ নেই। তাই দ্রুত রাস্তাটি সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী তোলার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। স্থানীয় বাসিন্দা শিশির বিক্রম জানিয়েছেন, সম্প্রতি বরিশাল পানিউন্নয়ন বোর্ডের বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলী মো. সাজিদুর রহমান সরদার সাতলা-বাগদা প্রকল্পের পুনর্বাসন কাজ পরিদর্শনে গিয়ে দীর্ঘদিনের চলাচল অযোগ্য রাস্তাটি দেখে হতবাক হয়ে যান। এরপরই তিনি নিজেই রাস্তাটির সংস্কারের দাবি জানিয়ে গত ১৪ জুলাই স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের

(এলজিইডি) বরিশাল বিভাগীয় অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর নিকট লিখিতভাবে আবেদন করেন। তবে ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে এখনও পর্যন্ত এলজিইডি কৃর্তপক্ষ কোন ব্যবস্থা নেয়নি বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে হারতা ইউপি চেয়ারম্যান হরেন রায় মুঠোফোনে জানান, ‘দীর্ঘ প্রায় চল্লিশ বছর আগে নির্মিত ওই রাস্তাটি সংস্কারের জন্য স্থানীয় এলজিইডি দফতরে বহুবার আবেদন করা হলেও কোন সুফল হয়নি।

গত চল্লিশ বছরে অনেক এমপি পরিবর্তন হলেও এখন অপরিবর্তিত দুর্দশার রাস্তাটি’।  স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী এ.কে.এম রেজাউল করিমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি সম্পর্কে দায়সারাভাবে বলেন, ‘রাস্তাটি দীর্ঘ বছর ধরেই চলাচলের অযোগ্য বলে শুনেছি। দ্রুত সংস্কারের জন্য চেষ্টা চলছে’।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335