বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৭:১০ অপরাহ্ন

বাঙালির শোকের দিন আজ

জিটিবি নিউজঃ আজ শোকাবহ ১৫ আগস্ট, জাতীয় শোক দিবস। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদতবার্ষিকী। ১৯৭৫ সালের বৃষ্টিঝরা শ্রাবণের এই দিনে বৃষ্টির বদলে ঝরেছিল রক্ত। বাংলার ৫৬ হাজার বর্গমাইলের মতো বিশাল জাতির পিতার বুক থেকে ঘাতকের বুলেটের আঘাতে রক্তগোলাপের মতো ঝরেছিল লাল রক্ত। কিন্তু তার অবিনশ্বর চেতনা ও আদর্শ ছিল মৃত্যুঞ্জয়ী। ঘাতকের সাধ্য ছিল না ইতিহাসের সেই মহানায়কের অস্তিত্বকে বিনাশ করে। বঙ্গবন্ধু মৃত্যুঞ্জয়ী। রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাযোগ্য মর্যাদায় ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আজ পালিত হচ্ছে জাতির পিতার শাহাদতবার্ষিকী।

সেদিন যা ঘটেছিল : বাঙালি ও বাংলাদেশের শোকের দিন আজ। ১৯৭৫-এর এই কালো দিনটিতেই জাতি হারিয়েছে তার গর্ব, আবহমান বাংলা ও বাঙালির আরাধ্য পুরুষ, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শত্রুদের প্ররোচনায় মানবতার দুশমন, ঘৃণ্য ঘাতকরা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করে। কিছু বিশ্বাসঘাতক রাজনীতিকের চক্রান্ত এবং সেনাবাহিনীর এক দল বিপথগামী সদস্যের বুলেটের নির্মম আঘাতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সেদিন প্রাণ হারান তার প্রিয় সহধর্মিণী বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তিন ছেলে মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল, সেনা কর্মকর্তা শেখ জামাল ও ১০ বছরের শিশুপুত্র শেখ রাসেল এবং দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, ভাই শেখ নাসের ও কর্নেল জামিল।

ইতিহাসের এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডে সেদিন আরো প্রাণ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর ভাগনে মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফজলুল হক মনি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, শহীদ সেরনিয়াবাত, শিশু বাবু, আরিফ রিন্টু খানসহ অনেকে। এ কারণে আজ বেদনাবিধুর ও কলঙ্কের কালিমায় কলুষিত বিভীষিকাময় ইতিহাসের এক ভয়ঙ্কর দিন। আগস্ট মাসটি বাংলাদেশের মানুষের কাছে শোকের মাসে পরিণত হয়েছে আজকের এই দিনটির জন্য। ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর বাসভবনে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হলেও সেদিন আল্লাহর অসীম কৃপায় দেশে না থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী : জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা, মহান স্বাধীনতার রূপকার। আসুন জাতীয় শোক দিবসে আমরা জাতির পিতাকে হারানোর শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করি এবং তার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে আত্মনিয়োগ করি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, জাতির পিতার দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাঙালি জাতি পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ছিনিয়ে এনেছিল আমাদের মহান স্বাধীনতা। আসুন তার ত্যাগ এবং তিতিক্ষার দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনাদর্শ ধারণ করে সবাই মিলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলি। জাতীয় শোক দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

শোক দিবসের কর্মসূচি : আজ সরকারি ছুটির দিন। সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সকাল সাড়ে ৬টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। সকাল সাড়ে ৭টায় ঢাকার বনানীর কবরস্থানে ১৫ আগস্ট শাহাদতবরণকারী জাতির পিতার পরিবারের সদস্যবৃন্দ ও অন্য শহিদদের কবরে পুষ্পস্তবক ও ফুলের পাপড়ি অর্পণ এবং ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। একই দিন টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে ফাতেহা পাঠ, পুষ্পস্তবক অর্পণ, মোনাজাত ও বিশেষ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া সারা দেশের মসজিদসমূহে বাদ জোহর বিশেষ মোনাজাত এবং মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। এছাড়া জাতীয় দৈনিক ও সাময়িকীগুলো ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি : আজ সূর্যোদয় ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সকল স্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ এবং কালো পতাকা উত্তোলন, সকাল সাড়ে ৮টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, সকাল পৌনে ৯টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনসহ ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও দোয়া মাহফিলের অয়োজন করবে আওয়ামী লীগ। এছাড়া সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে অংশ নেবে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল।

জেপির বিবৃতি : জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি এবং দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী শেখ শহীদুল ইসলাম এক বিবৃতিতে বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যার মধ্য দিয়ে সেদিন মূলত হত্যা করা হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশ ও আমাদের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ এক অবিচ্ছেদ্য সত্তা। এই মহান নেতার নেতৃত্বেই বাংলাদেশের বীর জনগণ বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে আমাদের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করেছিল বাংলাদেশ নামক জাতিরাষ্ট্র। এজন্যই বঙ্গবন্ধু চিরঞ্জীব এক আদর্শের প্রতীক; যার মৃত্যু নেই। জাতির পিতার লক্ষ্য ছিল উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতি আজ আবারও ঐক্যবদ্ধভাবে সেই সংগ্রামে নিয়োজিত। আমাদের প্রমাণ করতে হবে, ব্যক্তি মুজিবকে ঘাতকরা হত্যা করতে পারলেও মুজিব আদর্শ অমর অক্ষয়।

দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য জাতীয় পার্টি-জেপির পক্ষ হতে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আজ সকাল সাড়ে ৬টায় জেপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দলের সকল কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ এবং কালো পতাকা উত্তোলন, সকাল ৮টায় ধানমন্ডিস্থ ৩২ নম্বর রোডে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, সকাল ৯টায় বনানী কবরস্থানে বেগম মুজিবসহ ১৫ আগস্টে নিহত সকল শহিদদের কবরে এবং সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার মাজারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335