শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৮:১০ অপরাহ্ন

মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ চিকিৎসকদের

জিটিবি নিউজঃ দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনায় বেহাল দশা বিরাজ করছে স্বাস্থ্য খাতে। করোনা পরিস্থিতিতে দেশের স্বাস্থ্য খাতের দুর্বলতা, ভঙ্গুর চিত্র ক্রমশই বের হয়ে আসছে। ভুয়া রিপোর্ট প্রদান, রোগীরা চিকিত্সা পাচ্ছেন না, বেসরকারি হাসপাতাল রোগী ফেরত দিচ্ছে, করোনার শুরুতে চিকিত্সকদের নকল সুরক্ষা সামগ্রী (এন-৯৫) প্রদানসহ নানা অব্যবস্থাপনা দেখিয়ে দিচ্ছে দেশের স্বাস্থ্য খাত কতটা দুর্বল, কতটা অনিয়মের আখড়া। মেশিন কেনাকাটা থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনুমোদনে চলছে সিন্ডিকেট বাণিজ্য। এর মধ্যে রিজেন্ট হাসপাতাল, জেকেজি হেলথ কেয়ার ও গুলশানের সাহাবুদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভুয়া টেস্টের দায় এড়াতে মুখোমুখি অবস্থানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার দায় কেউ এড়াতে পারেন না উল্লেখ করে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে এখনই ঢেলে সাজাতে হবে।

প্রকৃত অর্থে স্বাস্থ্য বিভাগে এখন যে সংস্কার দরকার তা হলো আমূল পরিবর্তন। যদি স্বাস্থ্য খাতের আমূল পরিবর্তন করা যায় তা হলে সব ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি কমে আসবে বলে অনেকে মনে করছেন। এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরকে ঢেলে সাজাতে হবে। তাহলে স্বাস্থ্যের মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন দুর্নীতি করার স্পর্ধা দেখাবে না। একজন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক বলেন, মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকে ঢেলে সাজাতে হবে। এক্ষেত্রে শতভাগ পরিবর্তন হওয়া উচিত।

বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতিবাজদের ধরার পাশাপাশি এ সেক্টরকে ঢেলে সাজাতে পরামর্শ গ্রহণের জন্য এক সদস্যের বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে বলেন, সাহেদ-সাবরিনাকে এ পর্যায়ে কারা নিয়ে এসেছেন? তাদের মাস্টারমাইন্ড কারা? তাদের কারণে বিদেশে সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়ার পাশাপাশি দেশবাসীর কাছে স্বাস্থ্য খাত দুর্নীতির আখড়া হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সরকারের এতো বড় অর্জন ম্লানকারী এই গোষ্ঠীকে আইনের আওতায় আনতে হবে। ধরার মতো ধরতে হবে। আর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এটা করতে পারবেন।

স্বাধীনতা চিকিত্সক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব ডা. এম এ আজিজ বলেন, পুরো মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকে ঢেলে সাজাতে হবে। অধিদপ্তরকে ঢেলে শিক্ষা, প্রশাসন ও প্রাইভেট সেক্টরসহ চারটি ডিজি করতে হবে। মন্ত্রণালয় সব সময় অধিদপ্তরে খবরদারি করে। ডা. এম এ আজিজ বলেন, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও মালয়েশিয়ায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিকিত্সকদের প্রতিনিধি থাকেন। আমাদের দেশেও এটা প্রয়োজন। কারণ নন-মেডিক্যাল পারসনদের বুঝতে বুঝতেই সময় পার হয়ে যায়। কাজের কাজ কিছু হয় না।

অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে চিকিত্সা খাতে রীতিমতো নৈরাজ্য বিরাজ করছে। একদিকে মানুষ ঠিকমতো চিকিত্সাসেবা পাচ্ছেন না, অন্যদিকে ভুল চিকিত্সা ও ভুয়া চিকিত্সকের দৌরাত্ম্য মারাত্মকভাবে বেড়েছে। করোনাকালে এই সংকট আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। দেশে করোনা ভাইরাস চিকিত্সায় প্রতারণার অভিযোগে অভিযুক্ত রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদ এবং জেকেজি হেলথ কেয়ারের আরিফ ও সাবরিনা। এরা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন ভুয়া করোনা রিপোর্ট দিয়ে। সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন এরা। এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় সবাই।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, আমরা দীর্ঘদিন থেকে লক্ষ্য করে আসছি, দেশের স্বাস্থ্য খাতে যখন কোনো সমস্যা হয়, তখন তাতে তাত্ক্ষণিক কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তারপর সব কিছুই আগের মতো। এখানে সরকারের আন্তরিকতা বা রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব আছে কি না, তা তলিয়ে দেখতে হবে। স্বাস্থ্য খাতের মূল সমস্যা হচ্ছে পুরোনো ধাঁচের ব্যবস্থাপনা। সে কারণে কোনো সংকট দেখা দিলে তাতে তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করা হয়।

কিন্তু স্থায়ী কোনো পরিকল্পনা হয় না। এটা সত্য করোনা চিকিত্সায় সমন্বয়হীনতার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় একে অন্যের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। সাহাবুদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মালিক মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এই হাসপাতাল কীভাবে করোনা পরীক্ষার অনুমোদন পায়? করোনার নমুনা সংগ্রহের বৈধ অনুমতি পাওয়ার পরও টাকার লোভে ভুয়া টেস্ট শুরু করেছিল জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ার (জেকেজি)। এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ১৫ হাজার ভুয়া রিপোর্ট প্রদান করে। জেকেজিকে ৪০০ কোটি টাকার কাজ দিতে চেয়েছিলেন একজন আমলা।

এর মধ্যে মন্ত্রণালয়ের এক শ্রেণির কর্মকর্তারা ভাগ পেতেন ১০০ কোটি এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক শ্রেণির কর্মকর্তারা পেতেন ৫০ কোটি টাকা। এভাবেই টাকার ভাগাভাগির পরিকল্পনা হয়। কিন্তু কোনো কারণে জেকেজি সেই কাজটি পায়নি। তাই এর বিকল্প হিসাবে ঐ আমলা করোনা শনাক্তকরণে নমুনা সংগ্রহের কাজটি পাইয়ে দেন জেকেজিকে। অথচ স্যাম্পল সংগ্রহের জনবল নেই জেকেজির। ঢাল নেই, তলোয়ার নেই, নিধিরাম সর্দারের মতো অবস্থা থাকলেও সচিবের নির্দেশে জেকেজি অনুমোদন পায়। মন্ত্রণালয়ের ঐ গ্রুপটিই সাহেদকে সার্বিক সহযোগিতা করে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেন, দুদক তাদের বিষয়টি তদন্ত করছে। এ ব্যাপারে সহযোগিতা করবেন গোয়েন্দা সদস্যরা।

নার্সিং সেক্টরেও দুর্নীতি ও অনিয়ম যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। নার্সিং অধিদপ্তরের একজন পরিচালক দুর্নীতির পাশাপাশি নারী কর্মকর্তাদের উত্ত্যক্তও করেন। অফিসের পাশাপাশি রাতেও ফোনে উত্ত্যক্ত করা হয়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে অনেক কাজ করেছেন। আন্তর্জাতিক মানের নিউরো সাইন্স ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতাল, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল-২, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট, ইএনটি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছেন।

নিউরো সাইন্স ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালকে আরো ৫০০ বেডে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অত্যাধুনিক চিকিত্সা সরঞ্জাম দেওয়া হয়েছে। আগে পোড়া রোগীরা চিকিত্সা পেতেন না। এখন তারা সুচিকিত্সা পাচ্ছেন। পোড়ার পর প্লাস্টিক সার্জারিও স্বল্পমূল্যে করা হচ্ছে। পঙ্গু হাসপাতাল ও ঢাকা শিশু হাসপাতালকে সংস্কার করা হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য খাতের সার্বিক অগ্রগতিতে বড় বাধা দুর্নীতি। এক শ্রেণির আমলা বড় বড় দুর্নীতিতে জড়িত। দীর্ঘদিন ধরে আমলারা দুর্নীতি করলেও তারা সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335