শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৮:৩৫ অপরাহ্ন
জিটিবি নিউজঃ বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার ইলুহার ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড মলুহারের চাঁদেরহাটে হয়ে গেলো উৎসব মুখর নান্দনিক এক ঘুড়িকাটার লড়াই। শুক্রবার (৩ জুলাই) বিকেলে শুরু হয়ে এ লড়াই গড়ায় সন্ধ্যা পর্যন্ত। চাঁদেরহাটের সবুজ শ্যামল গ্রামের পশ্চিম মলুহার রেজিষ্টার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে অনুষ্ঠিত হয় এ উৎসব।
ঘুড়ির লড়াই দেখতে এ সময় গ্রামের বিভিন্ন বয়সের শত শত নারী-পুরুষ ভীর করেণ। লড়াইয়ে পক্ষ-বিপক্ষে লোক থাকলেও একখানা ঘুড়ি কাটলেই গগণ ফাটা চিৎকার করতে থাকেন উপস্থিত সকল জনতারাই। এ এক অন্যরকম অনুভূতি ছিলো তাদের মধ্যে। ঘুড়ির লড়াইয়ে মোট ৮টি গ্রুপ অংশ নেয় বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য,দেশে করোনাকালে মানুষের মধ্যে এক প্রকার ভীতি কাজ করছে। চারদিকে আতঙ্ক আর উৎকন্ঠা।
এর মধ্যেই ঘুড়ি উড়িয়ে মনে কিছুটা প্রশান্তি আনতে আপ্রান চেষ্টা করছেন বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার শত শত কিশোর,যুবক এমনকি ৫০/৬০ বছরের বৃদ্ধরাও। আষাঢ়ে থেমে থেমে বৃষ্টি ঝঁড়ার মাঝে আকাশ যখন তার প্রকৃত নীল-সাদা রঙে ফিরে আসে তখনি পৌর শহর থেকে শুরু করে উপজেলার সব পাড়া মহল্লায় ঘুড়ি ওড়াতে নেমে পড়েন তারা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এসব ঘুড়ি আকাশে ওড়াতে দেখা যায় এখানে। প্রকৃত পক্ষে ঘুড়ি এক প্রকারের হাল্কা খেলনা, যা সুতা টেনে আকাশে ওড়ানো হয়। সাধারণত পাতলা কাগজের সাথে চিকন বাঁশের কঞ্চি লাগিয়ে ঘুুড়ি তৈরি করা হয়। বিভিন্ন আকারের এবং অনেক উপাদান ও নকঁশার ঘুড়ি ওড়ানো হয় এখানে।
কেবল আমাদের দেশেই নয়, বিশ্বজুড়েই ঘুড়ি ওড়ানো একটি মজার খেলায় পরিনত হয় এ সময়ে। এলাকায় এলাকায় ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসব ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান প্রভৃতি দেশে ঘুড়ি ওড়ানো একটি বিনোদনমূলক অবসরকালীন উৎসব বলে গন্য হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে, বিশেষ করে পুরনো ঢাকায় পৌষ মাসের শেষ দিন, অর্থাৎ পৌষ সংক্রান্তিতে ঘুড়ি ওড়ানো উৎসব পালন করা হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিশ্বকর্মা পূজার দিন ঘুড়ি ওড়ানোর প্রথা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে চীন দেশে সর্বপ্রথম ঘুড়ি ওড়ানোর প্রচলন শুরু হয়। কালের পরিক্রমায় এই উৎসব এশিয়ার অন্যান্য দেশ-বাংলাদেশ, ভারত, জাপান এবং কোরিয়ায়সহ বিভিন্ন দেশে শুরু হয়। ইউরোপে ঘুড়ি খেলাটির প্রচলন হয় প্রায় ১ হাজার বছর আগে। প্রথমদিকে ঘুড়ি,কাগজ অথবা হাল্কা সিল্কের কাপড় দিয়ে ওড়ানো হতো। ব্যবহৃত অন্যান্য উপাদানের অংশ হিসেবে ঘুড়িতে বাঁশের কঞ্চি কিংবা অন্যান্য শক্ত অথচ নমনীয় কাঠ দিয়ে তৈরী করা হয়ে থাকে।
আধুনিককালের ঘুড়ি গুলোয় সিনথেটিকজাতীয় পদার্থের প্রচলন রয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ঘুড়ি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রচলিত। ঘুড়ি আকারে বড় ও ছোট হয়,দেখতে নয়নাভিরাম। ঘুড়ির কাগজ সাধারণত বেশ পাতলা, ফলে ঘুড়ি হালকা এবং বাতাসে ভাসার উপযোগী হয়। অনেক দেশেই ঘুড়ি বানানোর জন্য সাদা কাগজের পাশাপাশি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রঙিন কাগজ ব্যবহার করা হয়।
অন্য ঘুড়ির সুতা কাটার উদ্দেশ্যে কাচের গুঁড়ো, আঠা ইত্যাদি মিশ্রিত বিশেষ মশলা যা সুতায় মাখিয়ে রোদে শুকানো হয়। ঘুড়ির লড়াইয়ে সাধারণত একাধিক লড়াকু মাঞ্জা দেওয়া সূতা দিয়ে ঘুড়ি উড়িয়ে একজন আরেকজনের ঘুড়িকে টানে অথবা ছেড়ে (ঢিল পদ্ধতিতে) কাটার চেষ্টা করেন। বিজয়ী ঘুড়ির আকাশে উড়তে থাকে আর হেরে যাওয়া অর্থাৎ কেটে যাওয়া ঘুড়ি বাতাসে দুলতে দুলতে ভুপাতিত হয়। ভুপাতিত ঘুড়ি কুড়িয়ে নেয়ার জন্য কিশোর-যুবক-বৃদ্ধ চেষ্টা করেন। বিভিন্ন দেশে ঘুড়ির বিভিন্ন রকম নামকরণ করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ঘুড়ির নিম্নবর্ণিত নামগুলো রয়েছে চারকোণা আকৃতির বাংলা ঘুড়ি, ড্রাগন, বক্স, মাছরাঙা, ঈগল, ডলফিন, অক্টোপাস, সাপ,ব্যাঙ, মৌচাক, কামরাঙা, আগুন পাখি, প্যাঁচা, ফিনিক্স, জেমিনি, চরকি লেজ, পাল তোলা জাহাজ, জাতীয় পতাকা প্রমূখ।