শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০৯ পূর্বাহ্ন
জিটিবি নিউজডেস্কঃ হাল সনের প্রথম থেকেই বিদ্যুৎ বিলের লাগামহীন দৌড়াত্ব যেন হার মানিয়ে দিয়েছে মোবাইল গ্যাসসহ অন্য সকল সেবাদানকারী সংস্থাগুলিকে। তবে ইহা করোনার অজুহাতকে পুজি করে তান্ডব চালিয়ে যাচ্ছে দৈতের মতই। সাড়া দেশে সাধারন মানুষের সীমাহীন অভিভোযোগ।
ভুতুড়ে বিলের কারণে সীমাহীন ভোগান্তিতে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের সাধারণ মানুষ। গত মে মাসে স্বাভাবিকের চাইতে চার থেকে ১০ গুণ বেশি বিল আসার অভিযোগ করেছেন তারা।
কিন্তু বিদ্যুৎ অফিস থেকে বলা হয়েছে, চলতি মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে এই বিল পরিশোধ না করলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।
এমন অবস্থায় উদ্বেগের মধ্যে আছেন এই ভোক্তারা। ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা রাফানি রাফা গত ১৭ বছর ধরে এলিফেন্ট রোড এলাকায় থাকেন।
প্রতিমাসে তার বিদ্যুৎ বিল আসে গড়ে চার হাজার টাকার মতো। গত মার্চ ও এপ্রিল মাসে এই বিল কিছুটা বাড়লেও শুধুমাত্র মে মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকার বিল পাঠানো হয়।
হঠাৎ এতো বেশি বিল আসার কারণ জানতে তিনি স্থানীয় বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির অফিসে যোগাযোগ করলেও, কোনো সদুত্তর পাননি।
‘শুধু এক মাসের বিল কিভাবে ২০ হাজার টাকা হয়? মে মাসে তো এতো গরমও পড়েনি। তখন ঝড় বৃষ্টি হয়েছিল। আবহাওয়া ঠান্ডা ছিল, এসিও ছাড়তে হয়নি। পরে বিদ্যুৎ অফিসে গেলে তারা জানায় এপ্রিল মাসের বিল অনুযায়ী গড় করা হয়েছে। কিন্তু এটা তো কোন যৌক্তিক কথা হতে পারে না,’ বলেন রাফা।
ঢাকার মিরপুর, পান্থপথ, গুলশান, বারিধারা, মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দাদেরও অভিযোগ তাদেরকে মে মাসে, স্বাভাবিকের চাইতে কয়েকগুণ বেশি বিল পরিশোধ করতে হয়েছে।
ঢাকার বাইরে পল্লি বিদ্যুতের লাইন যারা ব্যবহার করেন। তাদের বিলেও এমন অস্বাভাবিক চিত্র দেখা গেছে। খুলনার কয়রা উপজেলার বাসিন্দা জয়ন্ত মুখার্জিকে এই ভুতুড়ে বিলের ফাঁদে পড়তে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘গত এপ্রিলে আমার বিল এসেছিল ৮০৩ টাকা। পরে দেখা যায় আসল বিল এসেছে মাত্র ৮২ টাকা। মানে প্রায় ১০ গুণ বেশি বিল এসেছে।’
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে কয়রা উপজেলার নিজ গ্রামে থাকছেন মুখার্জি।
খুলনা শহরে তিনি যে বাসায় থাকেন সেটি গত তিন মাস ধরেই খালি পড়ে আছে। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে কোনো বিদ্যুৎ খরচ হয়নি।
অথচ ওই তিন মাসে মোট বিদ্যুৎ বিল প্রায় দুই হাজার টাকার মতো এসেছে। সেই বিল নিয়ে তিনি স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসে গেলে তাকে সমাধান দূরে থাক, বরং অসংলগ্ন ব্যবহার করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
‘আমি যখন বিল নিয়ে বিদ্যুৎ অফিসে গেলাম তারা আমাকে হুমকি ধমকি দিল। বলল, বিলে যেটা লেখা সেটা পরিশোধ না করলে মামলা করে দেবে। আমাদের এলাকার প্রায় সবার বিল এতো অস্বাভাবিক এসেছে, যা কেউ কল্পনাও করেনি।’
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সরকারের পক্ষ থেকে জুন মাস পর্যন্ত বিলম্ব ফি ছাড়া বিদ্যুৎ বিল দেয়ার সুবিধা দেয়া হয়।
সে হিসেবে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া হয় জুন মাসের মধ্যে সব বকেয়া বিল পরিশোধের।
কিন্তু তিন মাসের বিদ্যুৎ বিল একসাথে করায় সেইসাথে মে মাসের বিদ্যুতের বিল অনেক বেশি দেখানোয় সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ ভোক্তারা।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বিইআরসি পহেলা মার্চ থেকে বিদ্যুতের দাম ৫-১০ ভাগ বাড়িয়ে নতুন দাম কার্যকর করায় এবং বছর শেষে বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর রাজস্ব আদায়ের চাপ থাকায় এতো অস্বাভাবিক বিল এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এসকল অভিযোগ বা সমস্যা থেকে জনগণকে বাচতে হলে প্রতিমাসের বিল সঠিক সময়ে পরিশোধ এবং মিটার রিডারকে সতর্ক করে দেওয়ার কোন বিকল্প নেই বলে অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করেছেন।