বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১১:২৯ অপরাহ্ন

তিন নির্মাতার ত্রয়ী চলচ্চিত্র

জিটিবি নিউজঃ প্রত্যেক নির্মাতা সিনেমায় তাঁর জীবনকে আঁকার চেষ্টা করেন। কারও চলচ্চিত্রে তাঁর জীবন ও দর্শনের প্রভাব থাকে প্রত্যক্ষ, তো কারও থাকে পরোক্ষ। তিন ঋষি চলচ্চিত্রকার স্পেনের পেদ্রো আলমোদোভার, মেক্সিকোর আলেহান্দ্রো গঞ্জালেস ইনারিতু আর তুরস্কের সেমিহ কাপলানোগলুর ত্রয়ী (ট্রিলজি) সিনেমা নিয়ে আজকের আলাপ। এ চলচ্চিত্রগুলো তাঁদের ব্যক্তিগত জীবন দর্শন থেকে প্রভাবিত, কখনোবা হয়ে উঠেছে অটোবায়োগ্রাফি।

পেইন অ্যান্ড গ্লোরিকে জীবনের সবচেয়ে কাছের ছবি বলেছেন পেদ্রো আলমোদোভার। বয়স ও শারীরিক বিপর্যয়ের ফাঁদে পড়ে বিছানায় শুয়ে স্মৃতি রোমন্থন ছাড়া আর কী করার থাকে বয়স্ক নির্মাতার? সিনেমায় শিল্প সৃষ্টি না করতে পারার যন্ত্রণা এতই সাবলীল যে সিনেমার নির্মাতা আর সত্যিকারের নির্মাতা একাকার হয়ে গেছেন কোথায় যেন। এই কি বয়স্ক আলমোদোভার? তবে যুবক ও কিশোর আলমোদোভার কোথায়? এর জন্য দেখা চাই ‘আনইনটেনশনাল ট্রিলজির’ ল অব ডিজায়ার ও ব্যাড এডুকেশন। এক যুবক চলচ্চিত্রকারের সঙ্গে তাঁর বোন এবং উঠতি তরুণের ত্রিকোণ প্রেমের গল্প ল অব ডিজায়ার। আর ব্যাড এডুকেশন এক তরুণ চলচ্চিত্রকারের প্রেম ও চার্চের নিগ্রহ নিয়ে তৈরি। ত্রয়ীর প্রতিটি ছবিই একজন চলচ্চিত্রকারের প্রেম ও যৌনতা ঘিরে। এই চলচ্চিত্রকারই কি পেদ্রো আলমোদোভার?

আলেহান্দ্রো গঞ্জালেস ইনারিতুর জৌলুস যদি রেভেন্যান্ট দিয়ে আসে, তবে তাঁর সিগনেচার কাজ ‘ট্রিলজি অব ডেথ’। ইনারিতুর প্রথম ছবি আমোরেস প্যারোস কি হলিউডের বাদামি রঙের মাদক বিক্রির আস্তানা মেক্সিকো? নাকি ভিন্ন এক জীবনচিত্র! এ যে রুপালি পর্দায় মোড়ানো মেক্সিকোর জীবনধারা। নির্মাতা তাঁরই শৈশবকে তুলে এনেছেন নিজের চোখ দিয়ে। নিজ জন্মভূমি নিয়ে ইনারিতু ছাড়া আর কে ভালো বলতে পারবে? অমনিবাস গল্পের ননলিনিয় বলার ঢঙে নির্মিত আমোরেস প্যারোস যেন ইনারিতুর কৈশোরের মেক্সিকোকে নিয়ে এল সিনেমার পর্দায়। এই ত্রয়ীর পরবর্তী দুটি সিনেমা যদিও মেক্সিকো থেকে বেরিয়ে চলে গেছে আন্তর্জাতিক বাজারে। তথাপি ইনারিতুর জীবনদর্শন সেখানেও মিলবে বেশ করে। ২১ গ্রামস ও বাবেল নতুন করে জীবনের মানে বোঝাবে বলে রাখছি।

তুরস্কের সেমিহ কাপলানোগলু ওপরের দুই চলচ্চিত্রকারের মতো অতটা উচ্চকিত নন। সিনেমার বাজারে পেদ্রো আলমোদোভার ও আলেহান্দ্রো গঞ্জালেস যেখানে বড় বড় ঢেউ, সেমিহ কালানোগলু সেখানে একেবারেই শান্ত নদী। তাঁর সিনেমার বৈশিষ্ট্যও একদমই শান্ত নিরীহ প্রকৃতির। যেন আড়ালে বসে ক্যামেরা নিয়ে পাত্র–পাত্রীদের অনুসরণ করেন সেমিহ। তাতে যে সিনেমা তৈরি হয়, নৈঃশব্দ্যও যে শব্দ তৈরি করে তা–ই তাঁর চলচ্চিত্র।

বলে রাখি, তাঁকে তারকোভস্কি ঘরানার চলচ্চিত্রকার হিসেবে ধরা হয়। তাঁর ইউসুফ ট্রিলোজিকে বলা হয় সেমিহর অটোবায়োগ্রাফি। এক দুধওয়ালার একজন কবি হওয়ার গল্প ঘিরেই ইউসুফত্রয়ীর ছবি তিনটি। এগ, মিল্ক ও হানি—তিনটি ছবিতে কাব্যিকভাবে এক কবির আড়ালে সেমিহ যেন তাঁর চলচ্চিত্রকার হওয়ার গল্পই তুলে আনলেন। বিশেষ করে হানি ছবিটির প্রাকৃতিক নৈঃশব্দ্য অন্য জীবন তুলে আনে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335