বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৪৫ পূর্বাহ্ন

করোনা: বরিশাল বিভাগে আক্রান্ত ১০০ ছাড়াল, ১৭ জনই স্বাস্থ্যকর্মী

জিটিবি নিউজঃ বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় গতকাল শনিবার নতুন করে একজন চিকিৎসকসহ আটজনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এই আটজনের সাতজনই বরগুনার। বাকি একজন পটুয়াখালীর। নতুন আটজন নিয়ে এই বিভাগে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১০১ জনে। এর মধ্যে ১০ জন চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মী ১৭ জন।

সংক্রমণ বৃদ্ধি এবং একের পর এক স্বাস্থ্য কর্মী আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। এরই মধ্যে কয়েকটি কয়েকটি হাসপাতাল লকডাউন, কিছু হাসপাতালের কার্যক্রম সীমিত করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিভাগের তিন জেলায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে বেশি বেশি নমুনা সংগ্রহের নির্দেশনা দিয়েছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগ। পাশাপাশি এসব জেলায় চিকিৎসকেরা আক্রান্ত হওয়ায় চিকিৎসা কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয় সে জন্য বিকল্প ব্যবস্থার চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বরিশালে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ৯ এপ্রিল পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলায়। আর বরিশাল জেলায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ১২ এপ্রিল। গতকাল শনিবার রাত পর্যন্ত ১৭ দিনে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় শনাক্ত হয়েছেন ১০১ জন। এর মধ্যে বরিশালে ৩৬ জন, বরগুনায় ৩০ জন, পটুয়াখালীতে ২০ জন, পিরোজপুরে সাতজন ও ঝালকাঠিতে ছয়জন। এ ছাড়া গত শুক্রবার প্রথমবারের মতো ভোলায় দুজন শনাক্ত হয়। বিভাগে এ পর্যন্ত মারা গেছেন চারজন।

আক্রান্তদের মধ্যে নিয়মিত ও ইন্টার্ন চিকিৎসক ৯ জন, একজন মেডিকেল ছাত্র, চারজন নার্স, তিনজন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন। এদের মধ্যে সর্বশেষ গতকাল শনিবার নতুন করে বরগুনার বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক তরুণ চিকিৎসকের করোনা পজিটিভ হয়েছে।

১৭ এপ্রিল বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ড-৩ তথ্য গোপন করে এক করোনা রোগী ভর্তি হওয়ার পর ওই ইউনিটে দায়িত্বরত নয়জন চিকিৎসক, নার্স, করোনা আক্রান্ত হন। এ ঘটনায় মেডিসিন ইউনিটটি লকডাউন করতে বাধ্য হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে জেলার বাবুগঞ্জ ও আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তিনজন চিকিৎসক, তিনজন স্বাস্থ্য কর্মী করোনা শনাক্ত হওয়ায় ১৬ এপ্রিল থেকে এ দুটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স লকডাউন করা হয়। পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আক্রান্ত হওয়ায় স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম সীমিত করা হয়। নতুন করে বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হলেও হাসপাতালটি লকডাউন করা হয়নি। তবে রোববার সিদ্ধান্ত হতে পারে।

আক্রান্তের গতি-প্রকৃতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, বরিশাল, বরগুনা ও পটুয়াখালীতে গত এক সপ্তাহ ধরে করোনা রোগী বাড়ছে। বরগুনায় ৯ এপ্রিল একজন করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ার পর সেখানে ১১ এপ্রিল আরও একজন রোগী শনাক্ত হয়। ২৫ এপ্রিলের মধ্যে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ৩০ জনে। বরিশালে ১২ এপ্রিল প্রথম এক রোগীর মৃত্যুর মধ দিয়ে করোনা শনাক্ত হয়। এরপর ১৪ এপ্রিল একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকসহ ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়। ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত জেলা আক্রান্ত ছিল ১৪ জন। ২৪ এপ্রিলের মধ্যে তা বেড়ে হয় ৩৬ জনে।

পটুয়াখালী জেলায় ৯ এপ্রিল প্রথম শনাক্ত রোগী মারা যাওয়ার পর ২০ এপ্রিল পর্যন্ত দুজন আক্রান্ত ছিলেন। কিন্তু ২১ এপ্রিল একদিনে নতুন ৮ জন আক্রান্ত হয়ে সংখ্যা দাঁড়ায় ১০ জনে। এরপর গত ৫ দিনে আরও ১০ জন রোগী শনাক্ত হয়। তবে ঝালকাঠি ও পিরোজপুরে গত ১০ দিন ধরে রোগী সংখ্যা স্থিতিশীল রয়েছে। ভোলায়ও নতুন করে কেউ আক্রান্ত হয়নি।

স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, বরিশাল, বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলায় আক্রান্তের হার বৃদ্ধির পেছনে গ্রামে ফেরত লোকজনের ভূমিকা বেশি। এই তিন জেলায় আক্রান্তদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আক্রান্তদের ৭০ ভাগই নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা এবং সাভার থেকে ফেরা শ্রমিক। বাকিরা এদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তি।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল আজ রোববার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এখন স্বাস্থ্য বিভাগের কেউ আক্রান্ত হলে পুরা হাসপাতাল লকডাউন হবে না। প্রয়োজনে ওই হাসপাতালের চিকিৎসকদের কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়ে অন্য এলাকার চিকিৎসক এনে সাময়িক কার্যক্রম চালু রাখা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335