শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৪:০২ অপরাহ্ন

ফাইল চাপায় পড়ে আছে বগুড়ার নির্মিতব্য রেলপথ

স্বাধীনতার পর থেকে প্রকল্পটি বারবার উঠেছে বাস্তবায়নের তালিকায়। প্রধানমন্ত্রীরও এতে সম্মতি আছে। সম্ভাব্যতা যাচাইও হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর আলোর মুখ দেখছে না বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জের জামতৈল পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার রেলপথ। এ রেলপথ চালু হলে উত্তরের ১৬টির মধ্যে ১২ জেলার সঙ্গে রাজধানীর দূরত্ব কমত ১৫০ কিলোমিটার। রেলপথ মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
২০০৭ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, বিশ্বব্যাংক ও জাইকা রেলে সংস্কারের শর্তে ছয়টি প্রকল্পে চার হাজার ২০০ কোটি টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তাতে বগুড়া-জামতৈল রেলপথটিও ছিল। ২০০৮ সালে এর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ হয়। তাতে সহযোগিতা করেছিল এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। ভারতীয় রাষ্ট্রীয় ঋণে বাস্তবায়নের জন্যও এটি তালিকাভুক্ত হয়েছিল। কিন্তু আঞ্চলিক যোগাযোগ উন্নয়নে এ রেলপথ কাজে আসবে না- এ যুক্তিতে প্রকল্পটি আর বাস্তবায়িত হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন রাজনৈতিক জোর ছাড়া রেলে কোনো প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে না। বগুড়া-জামতৈল রেলপথ এ চক্করে পড়েছে। বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল মান্নান এ বিষয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর সিরাজগঞ্জের এক জনসভায় আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে রেলপথটি নির্মাণের অনুরোধ জানিয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রী তাতে সম্মতি দেন। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির সবুজ পাতায় এটি অন্তর্ভুক্তও হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে বিদেশি অর্থায়ন লাগবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি স্বীকার করেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে রাজনীতিবিদদের আরো জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে।
রেলওয়ের সঠিক পরিকল্পনার অভাবে নীলফামারী, সৈয়দপুরসহ উত্তরাঞ্চল থেকে ছেড়ে যাওয়া ঢাকাগামী ট্রেনগুলোয় শুধু জ্বালানি খাতে সরকারকে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে। ৭২ কিলোমিটার বগুড়া-জামতৈল রেলপথ স্থাপন করা হলে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় সম্ভব। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, সৈয়দপুর থেকে নীলসাগর, দিনাজপুর থেকে দ্রুতযান, একতা, রংপুর থেকে রংপুর এক্সপ্রেস ঢাকায় আসতে অতিরিক্ত ১১৪ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে। এতে বাড়তি সময় লাগে প্রায় তিন ঘণ্টা। অতিরিক্ত জ্বালানি পোড়ে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, এমজি লাইনের (কাউনিয়া-বগুড়া লাইন) ট্রেনগুলোকে বগুড়া থেকে সান্তাহার, সেখান ঈশ্বরদী হয়ে জামতৈল যেতে হচ্ছে। এতে পাড়ি দিতে হয় ১৮৯ কিলোমিটার পথ। অথচ বগুড়া থেকে জামতৈলের দূরত্ব মাত্র ৭২ কিলোমিটার। একইভাবে ডিজি লাইনে (পার্বতীপুর-সান্তাহার-বগুড়া) চলাচলকারী ট্রেনগুলোকে সান্তাহার থেকে ঈশ্বরদী হয়ে জামতৈলে যেতে হচ্ছে। এতে ১৪৯ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। বগুড়া-জামতৈল রেলপথ হলে সে ক্ষেত্রে ৩৪ কিলোমিটার দূরত্ব কমত।
সিরাজগঞ্জ স্বার্থরক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ডা. জহুরুল হক রাজা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সিরাজগঞ্জ-বগুড়া রেলপথ স্থাপনের জন্য আমরা আন্দোলন করছি ২০০০ সাল থেকে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে উত্তরের ১২টি জেলা। সিরাজগঞ্জ থেকে উত্তরে সার, পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহনের জন্যও এ রেলপথ জরুরি। উত্তরাঞ্চলের রাজনীতিবিদরা ভূমিকা রাখলে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব।’
২০০৬ সালে নতুন রেলপথ স্থাপন, সংস্কার ও যাত্রীবাহী কোচ কেনার জন্য তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রণালয় উন্নয়ন প্রকল্প ছক (আমব্রেলা ডিপিপি) তৈরি করেছিল। এডিবি, বিশ্বব্যাংক ও জাইকা এতে সহায়তা দিতে আগ্রহী দেখায়। ২০০৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সরকার এডিবির সঙ্গে ঋণচুক্তিও করে। কিন্তু চুক্তিতে ব্যাংকটি রেলওয়ে বিভাগের কাঠামো বদলে এর ক্ষমতা বাড়ানোর শর্ত দেয়। বিশ্বব্যাংক ও জাইকাও বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়।
জানা গেছে, রেলওয়ে পুনর্গঠনের জন্য একটি প্রশাসনিক কাঠামোর প্রস্তাবনা তৈরি করে প্রকল্পের কর্মকর্তারা ২০০৮ সালের নভেম্বরে তখনকার যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে (এখন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়) পাঠান। তবে রেলওয়ের সংস্কার বাস্তবায়িত না হওয়ায় বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাইকার প্রতিশ্রুত চার হাজার ২০০ কোটি টাকা আটকে যায়।
পশ্চিম রেলের মহাব্যবস্থাপক খায়রুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ভারতীয় ঋণের আওতায় বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি তালিকাভুক্ত হয়েছিল। কিন্তু প্রকল্পটি আঞ্চলিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে তেমন কার্যকর হবে না বিবেচনায় বাদ পড়ে।
রেলের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রেলের এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আমাদের পরিকল্পনা আছে। অর্থায়ন নিশ্চিত হলেই এর কাজ শুরু হবে।’

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335