শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১৬ অপরাহ্ন

স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ছাত্রীদের বিকাশ

পরিষ্কার পানি, উপযুক্ত স্যানিটেশন সুবিধা এবং আনুষঙ্গিক স্বাস্থ্যবান্ধব সুযোগের অভাব মাসিক স্বাস্থ্যের ব্যবস্থাপনা কঠিন করে তুলছে। বিশেষ করে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরাপদ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সুযোগ না থাকায় ছাত্রীদের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এ অবস্থায় মাসিক সম্পর্কিত যথাযথ তথ্য ও জ্ঞানপ্রাপ্তি, নিরাপত্তা এবং মর্যাদাসম্বলিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা করার সামর্থ্য অর্জন জরুরি বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এ সংক্রান্ত একটি সার্ভে প্রতিবেদনে এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রজনন ও যৌন স্বাস্থ্য, মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা এবং জীবন দক্ষতার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জাতীয় কারিকুলাম ও পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে ‘ঋতু’ নামে একটি প্রকল্পের কাজ করছে ইউনিসেফ, ব্র্যাক, ওয়াটারএইড, আইসিডিডিআর’বি বিএনপিএসসহ ৩৫টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত প্লাটফর্ম।

নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের অর্থায়নে সিমাভির সহায়তায় পরিচালিত ‘ঋতু’ প্রকল্পটি যৌথভাবে বিএনপিএস, ডরপ, রেড অরেঞ্জ, টিএনও এবং এমএইচএম বাস্তবায়ন করছে। ওই প্রকল্পের আওতায় ২০১৬ সালে নেত্রকোনা জেলায় মাসিক স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ক বেজলাইন সার্ভে করা হয়। যেখানে জেলার ১৪৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চার হাজার ৪৬ ছাত্রী অংশ নেয়।

ওই সার্ভের প্রতিবেদন অনুযায়ী, টয়লেটের ভেতরে বা কাছাকাছি সাবান-পানির কোনো ব্যবস্থা না থাকা, নিরাপদ পানির নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহ না থাকা, টয়লেটের দরজা, ছিটকিনি, তালা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তার জন্য প্রাচীর ঠিকমতো না থাকা, টয়লেট পরিচ্ছন্নতার টেকসই ব্যবস্থার অভাব, পর্যাপ্ত আলো না থাকা, ঢাকনাযুক্ত কন্টেইনার, মাসিকের উপকরণ অপসারণের টেকসই ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে ৭৫ শতাংশ ছাত্রী মাসিকের সময় স্কুলের টয়লেটে যায় না। আর ৫৩ শতাংশ ছাত্রী এ সময় কমপক্ষে তিনদিন স্কুলে অনুপস্থিত থাকে। আর ৯১ শতাংশ ছাত্রী মাসিকের সময় অপরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করে। মাত্র ৩৬ শতাংশ প্রথম মাসিকের আগে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে।

ইউনেস্কোর মতে, মাসিক স্বাস্থ্যের জন্য বয়ঃসন্ধিসংক্রান্ত শিক্ষা, মাসিকসংক্রান্ত উপকরণ, সাবান, পানি, নিরাপদ টয়লেট ও বর্জ্য ফেলার উপযুক্ত জায়গা প্রয়োজন। কিন্তু সীমিত সম্পদ, বিদ্যমান অবকাঠামো এবং যথাযথ উদ্যোগের অভাবে অনেক স্কুলেই এসব সুবিধা থাকে না।

বাংলাদেশ ন্যাশনাল হাইজিন বেজলাইনের তথ্যানুযায়ী মাত্র ৪৪ শতাংশ বিদ্যালয়ে স্যনিটারি ন্যাপকিন রাখার আলাদা জায়গা রয়েছে। স্কুলগুলোতে পানি ও স্যানিটেশনের স্বাস্থ্যকর বাবস্থাপনার অভাব প্রকট। ৮৬ শতাংশ ছাত্রী মাসিকের সময় পুরানো কাপড় ব্যবহার করে। প্রায় এক চতুর্থাংশ ছাত্রী মাসিককালে স্কুলে যায় না এবং প্রায় এক তৃতীয়াংশ মনে করে মাসিকের সমস্যা স্কুলের কর্মকাণ্ডে তাদের স্বাভাবিক অংশগ্রহণে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। এমতাবস্থায় মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি ২০১৫ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মেয়েদের জন্য মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বান্ধব টয়লেট ও মাসিকের সময় প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিতের নির্দেশনা দিয়ে জারিকৃত প্রজ্ঞাপন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন জরুরি বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

বিএনপিএসের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর বলেন, মাসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে সঠিক ও ব্যাপক তথ্যের সম্প্রসারণ এবং মাসিক অনুকূল সেবা প্রদানমূলক পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন। মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শারীরিক শিক্ষা এবং গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বইয়ে বয়ঃসন্ধিকাল, ঋতুস্রাব, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ইত্যাদি বিষয়গুলো থাকলেও সেখানে তথ্যের অপর্যাপ্ততা ও যুক্তিসিদ্ধ বিন্যাসের ঘাটতি রয়েছে। তাই পাঠ্যক্রম পুনর্বিন্যাস এবং পাঠ্যপুস্তকে মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ও যৌনশিক্ষা বিষয়ক পাঠ যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ইসরাত জাহান ইলা বলেন, মাসিক স্বাস্থ্য যেহেতু যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যেরই একটি অংশ। তাই মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য মাসিককে স্বাস্থ্যসম্মত ও ইতিবাচক হিসেবে দেখার পরিবেশ পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রকে এটি নিশ্চিত করতে হবে। যাতে মেয়ে শিশু প্রথম মাসিকসহ মাসিককালে সব নারী তাদের পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের সহযোগিতা পায়। এছাড়া মাসিকের বর্জ্য অপসারণ ব্যবস্থাপনা যেন কিশোরী ও নারীদের সামাজিক বা সাংস্কৃতিক দিক থেকে বাধাগ্রস্ত না করে, সে বিষয়টিকেও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেয়া জরুরি।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335