বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৪৪ অপরাহ্ন

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাপার ঘাঁটি দখলে মরিয়া আ.লীগ

ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধা ঃ অক্টোবরে তফসিলের পর শুরু হবে মূল ভোটযুদ্ধ। সম্ভাব্য প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকদের পদ চারনে মূখর গ্রাম গোঞ্জে।
ঘটনাবহুল গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ আসন দখল নিয়ে ক্ষমতাসীন জোটের প্রধান দুই শরিকের মধ্যে লড়াই জমে উঠেছে। জাতীয় পার্টির (জাপা) ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত আসনটি এবার দখলে নিতে মরিয়া আওয়ামী লীগ। বসে নেই জামায়াতও। ভোটের হিসাবে গুরুত্ব না মিললেও এখানে বিএনপি বরাবরই জামায়াত বা জাতীয় পার্টিকে সমর্থন দিয়ে থাকে। যদিও স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত এখানে জয়ের মুখ দেখেনি বিএনপি। একবার জামায়াত আসনটি দখল করেছিল।

১৯৭৩ সালে এ আসনে আওয়ামী লীগে প্রার্থী শামসুল হোসেন সরকার বিজয়ী হন; কিন্তু ৭৯ সালে তিনি হেরে যান মুসলিম লীগে প্রার্থী রেজাউল আওয়াল খন্দকারের নিকট। ১৯৮৬ সালে শুরু হয় জাতীয় পার্টির স্বর্ণযুগ, ওই বছর ও ৯১ সালেও হাফিজুর রহমান এবং ৯৬ সালে সরকার ওয়াহিদুজ জামান জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন।
২০০১ সালে ছন্দপতন ঘটে, সেবার আসনটি ছিনিয়ে নেয় জামায়াতের মাওলানা আব্দুল আজিজ। ২০০৮ সালে জাতীয় পার্টি তা উদ্ধার করে, সেখানে বিজয়ী হন বহুল আলোচিত এমপি লিটন হত্যার প্রধান আসামি অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ডা. আব্দুল কাদির খান।
২০১৪ সালে বিনা ভোটের নির্বাচনে আসনটি দখলে নেন আওয়ামী লীগের মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। লিটন হত্যা পর এ আসনে ২০১৭ সালে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী গোলাম মোস্তফা বিজয়ী হন। তিনিও সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হলে চলতি বছরের ১৩ মার্চ উপ-নির্বাচনে বিজয়ী হন জাতীয় পার্টির প্রার্থী ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।
বর্তমানে ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৫৫৬ ভোটারের এ আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। বড় দুই দলের (জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ) মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। নিজেদের পরিচিতি তুলে ধরতে ব্যানার-ফেস্টুনসহ নানা প্রচারণা করছেন। সম্প্রতি উঠান বৈঠক ও জনসচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে তারা বাড়ি বাড়িও যাচ্ছেন। সব মিলে জমে উঠেছে এ আসনের নির্বাচন।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম মেম্বর ও বর্তমান এমপি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন নির্বাচনী মাঠে। তরুণ এ এমপির এলাকায় গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে। তিনি শিক্ষাবান্ধব ও সমাজসেবক হিসেবে মানুষের দৃষ্টি কেড়েছেন। সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য হিসেবে আগে থেকেই বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত। নিজে পার্টির উপজেলা শাখারও সভাপতি, পার্টির মধ্যে কোনো অমিল না থাকায় এবারও ভোটের অঙ্কে ভালো অবস্থানে রয়েছেন তিনি।

তবে ২০০১ সালে জামায়াত প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ায় সাংগঠনিকভাবে এখানে জামায়াত শক্তিশালী অবস্থানে যায়। গোটা উপজেলায় জামায়াতের ব্যাপক প্রভাব বৃদ্ধি পায়। সময়ে ব্যাবধানে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তার গুলিতে শিশু সৌরভকে হত্যাচেষ্টায় গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনা সুন্দরগঞ্জ আরও আলোচনায় উঠে আসে।
স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭৩ সালে দেশের প্রথম সংসদ নির্বাচনে আ.লীগ প্রার্থী সরকার নির্বাচিত করার পর আর আ.লীগ প্রার্থী এ আসনে বিজয়ী হতে পারেননি। পরবর্তী সময়ে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন আ.লীগ প্রার্থী প্রয়াত মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। তিনি নিহত হওয়ার পর শূন্য আসনে উপ-নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী প্রয়াত সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা আহমেদ। এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তারও মৃত্যু হলে আবার শূন্য হয়। পুনরায় উপ-নির্বাচনে এমপি লিটনের বড় বোন আনন্দ গ্রুপ অব কোম্পানিজ অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফরুজা বারীকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়। জাতীয় পার্টির প্রার্থী ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে বিজয়ী হন।

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটিতে আওয়ামী লীগের হাফ ডজন সম্ভাব্য প্রার্থী দলের মনোনয়ন পেতে এখন থেকেই জেলা এবং কেন্দ্রীয় পর্যায় দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন- নিহত সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের স্ত্রী জেলা মহিলা আ.লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক খুরশীদ জাহান স্মৃতি। তিনি স্বামীর সহচর হিসেবে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনায় রয়েছেন। ভোটারদের কাছেও তার ভালো একটা পরিচিতি রয়েছে। তিনি স্বামীর অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে চান বলে আশ্বাস দিচ্ছেন ভোটারদের।
অপরদিকে সাবেক এমপি লিটনের বড় বোন আনন্দ গ্রুপ অব কোম্পানিজ অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফরুজা বারীও আ.লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। ছোট ভাই মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের খুনিদের সঠিক বিচার ও দ্রুত রায় কার্যকর করার প্রতিশ্রুতি দেন এমপি লিটনের ভোটারদের। স্বামী ও ভাইয়ের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে দলীয় মনোনয়ন পেতে আগ্রহী দুজনই।

এ ছাড়াও পৌর মেয়র উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন, জেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দা মাসুদা খাজা, উপজেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম, উপজেলা যুগ্ম আহবায়ক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ভালোবাসি সুন্দরগঞ্জ’ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রেজাউল আলম রেজা ও সুন্দরগঞ্জ ডি ডব্লিউ ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ দলের সাবেক উপজেলা সহ-সভাপতি আব্দুল হান্নান এবং জেলা পরিষদ সদস্য এমদাদুল হক নাদিম দলের মনোনয়ন পেতে আগ্রহী। তবে মহাজোট হিসেবে নির্বাচনে গেলে অনেক হিসাব-নিকাশই পাল্টে যেতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় অনেক বয়ঃজ্যেষ্ঠ ভোটার ও রাজনীতিকরা।

এ আসনে বিএনপি কখনই শক্তিশালী অবস্থানে ছিল না। এখনো সাংগঠনিকভাবে দুর্বল। এ আসনে তাই বিএনপি অনেকটাই জোট নির্ভর। তবে নির্বাচনী হাওয়া উঠায় নড়েচড়ে উঠেছেন দলের নেতাকর্মীরা। তারা দল গোছাতে এখন ব্যস্ত। ২০ দলের জোটই নির্ধারণ করবে কোন দলের প্রার্থী এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। তারপরও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় পর্যায়ে তৎপরতা শুরু করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বর্তমানে জেলা সহ-সভাপতি ও সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম জিন্না এবং বর্তমান উপজেলা সভাপতি ও হরিপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোজাহারুল ইসলাম। তারা সাংগঠনিক তৎপরতার পাশাপাশি জনসংযোগও চালিয়ে যাচ্ছেন।
অপরদিকে জামায়াত নেতার মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের কঠোর দন্ড হওয়ায় নেতাকর্মীদের অনেকেই মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাদের অধিকাংশই রাজনীতিতে নিশিক্রয় হয়ে পড়েছে। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে ডামাডোল শুরু হওয়ায় সুন্দরগঞ্জে জামায়াতের নেতাকর্মীদের মধ্যে তার কিছুটা প্রভাব পড়েছে। তবে তাদের কার্যক্রম একেবারে নীরবে। তারা নিজস্ব প্রার্থী হিসেবে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মাজেদুর রহমানের নাম মাঠে ময়দানে ছড়িয়ে দিয়েছে। ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে মাজেদুর রহমানকেই তারা চায়।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335