বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৫:৫১ অপরাহ্ন

১০ উপায়ে অন্তর হোক পরিশুদ্ধ

জিটিবি নিউজ টুয়েন্টিফোর : আবু আবদুল্লাহ নোমান বিন বশির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘নিশ্চয় হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট। এ দুইয়ের মধ্যে রয়েছে সন্দেহজনক বিষয়, বেশির ভাগ মানুষ সেগুলো জানে না। অতঃপর যে ব্যক্তি সন্দেহজনক বিষয় থেকে বেঁচে থাকে, সে নিজের দ্বিন ও সম্মানকে ত্রুটিমুক্ত রাখে। আর যে ব্যক্তি সন্দেহজনক কাজে লিপ্ত হলো সে হারামে লিপ্ত হলো। যেমন কোনো রাখাল, তার (গবাদি) পশু সংরক্ষিত এলাকার আশপাশে চরায়। আর তখন আশঙ্কা সৃষ্টি হয়, যেকোনো সময় কোনো পশু তার মধ্যে ঢুকে পড়বে। সাবধান! প্রত্যেক বাদশাহরই সংরক্ষিত এলাকা থাকে। আর আল্লাহর সংরক্ষিত এলাকা হচ্ছে তাঁর নিষিদ্ধ বিষয়গুলো। সাবধান! নিশ্চয়ই মানবদেহে একখণ্ড গোশতের টুকরো আছে, যখন তা সুস্থ হয়ে যায় গোটা শরীরটাই সুস্থ হয়ে যায় এবং যখন তা অসুস্থ  হয়ে যায় গোটা শরীরই অসুস্থ  হয়ে যায়। জেনে রেখো! এটাই হচ্ছে কলব।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪১৭৮)

আলোচ্য হাদিসের শেষাংশে রাসুলুল্লাহ (সা.) আত্মশুদ্ধির তাগিদ দিয়েছেন। আত্মা পরিশুদ্ধ না হলে মানুষের জীবনের কোনো কিছু সুন্দর ও সুস্থভাবে পরিচালিত হয় না। এ জন্য আল্লাহ বলেছেন, ‘সে-ই সফল যে তার আত্মাকে পরিশুদ্ধ করেছে এবং যে তার আত্মাকে কলুষিত করেছে সে ক্ষতিগ্রস্ত।’ (সুরা আশ-শামস, আয়াত : ৮-৯)

আত্মা পরিশুদ্ধ করার বিভিন্ন উপায় ও পদ্ধতি কোরআন-সুন্নাহে পাওয়া যায়। যার কয়েকটি হলো—

১.  অন্তরের পবিত্রতার জন্য দোয়া করা : অন্তরের পবিত্রতা ও পরিশুদ্ধির জন্য এবং আল্লাহর বিধান পালনে তার দৃঢ়তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা আবশ্যক। রাসুলুল্লাহ (সা.) দোয়া করতেন, ‘হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে আপনার আনুগত্যে দৃঢ় করে দেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৯৪২০)

২. অন্তরের ব্যাধির ব্যাপারে উদাসীন না হওয়া : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই মানুষের অন্তর আল্লাহর দুই আঙুলের মধ্যে অবস্থিত, তিনি তা যেমন ইচ্ছা পরিবর্তন করেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৯২১)

৩. পরকালকে ভয় করা : আত্মার পরিশুদ্ধি ছাড়া কিয়ামতের দিন কোনো কিছুই উপকারে আসবে না। সুতরাং পরকালের ভয় অন্তরে উপস্থিত রাখতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আজ সম্পদ ও সন্তান কোনো উপকার করতে পারবে না, কেবল যে পরিশুদ্ধ আত্মা নিয়ে আল্লাহর কাছে আসবে।’ (সুরা শুআরা, আয়াত : ৮৮-৮৯)

কলবে সালিম, তা হলো শিরক ও বিদআতসহ অন্যান্য ব্যাধি ও অপছন্দনীয় বস্তু থেকে পবিত্র আত্মা। ফলে তার মধ্যে আল্লাহর মহব্বত ও ভয় ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট থাকে না।

৪. অন্তরের সুস্থতার জন্য দোয়া করা মুস্তাহাব : রাসুলুল্লাহ (সা.) আত্মশুদ্ধির জন্য নিয়মিত দোয়া করতেন। তাই আলেমরা আত্মশুদ্ধির জন্য দোয়া করা মুস্তাহাব বলে মত দিয়েছেন। মহানবী (সা.) দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে সুস্থ অন্তর (কলব) কামনা করছি।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৭১১৪)

৫. কোরআন-সুন্নাহে বর্ণিত আত্মশুদ্ধির পদ্ধতি অবলম্বন করা : আত্মশুদ্ধির বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণের আহ্বান জানিয়ে কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! রাসুল যখন তোমাদেরকে এমন কিছুর দিকে আহবান করেন যা তোমাদের প্রাণবন্ত করে, তখন তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ডাকে সাড়া দেবে। জেনে রেখো! আল্লাহ মানুষ ও তার অন্তরের মধ্যবর্তী হয়ে থাকেন।’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ২৪)

৬. আল্লাহর স্মরণ অন্তর নরম করে : আল্লাহর জিকিরে মানব হৃদয় প্রশান্ত ও নরম হয়। এতে আত্মার পরিশুদ্ধি লাভ হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘জেনে রেখো! আল্লাহর জিকিরেই অন্তর প্রশান্ত হয়।’ (সুরা রাআদ, আয়াত : ২৮)

৭. অসহায় মানুষের পাশে থাকা : হাদিস শরিফে এসেছে, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে তার অন্তরের কঠোরতা সম্পর্কে অভিযোগ করল। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বললেন, ‘যখন তুমি তোমার অন্তরকে নরম করার ইচ্ছা করবে তখন এতিমের মাথায় হাত বোলাবে এবং মিসকিনকে খানা খাওয়াবে।’ (মুসনাদ আহমদ, হাদিস : ৯০১৮)

৮. কবর জিয়ারত ও মৃত্যুর স্মরণ : কবর জিয়ারত ও মৃত্যুর স্মরণের মাধ্যমে মানুষের অন্তর আল্লাহমুখী হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ইতোপূর্বে আমি তোমাদেরকে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা তা জিয়ারত করো। কেননা নিশ্চয়ই তা আখিরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয় এবং অন্তরের উন্নতি ঘটায়।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৩০০৫)

৯. অন্তরের কঠোরতা পরিহার : কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা একাধিক স্থানে কঠোর হৃদয়ের নিন্দা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘… দুর্ভোগ সে কঠোর হৃদয় ব্যক্তিদের জন্য যারা আল্লাহর জিকির হতে পরাঙ্মুখ। তারা স্পষ্টত বিভ্রান্তিতে রয়েছে।’ (সুরা জুমার, আয়াত : ২২)

১০. কলুষিত আত্মার পরিণতি স্মরণ রাখা : রাসুলুল্লাহ (সা.) কলুষিত আত্মার পরিণতির ব্যাপারে সতর্ক করে বলেছেন, ‘সাবধান! নিশ্চয়ই মানবদেহে একখণ্ড গোশতের টুকরো আছে, যখন তা সুস্থ হয়ে যায় গোটা শরীরটাই সুস্থ হয়ে যায় এবং যখন তা অসুস্থ হয়ে যায় গোটা শরীরই অসুস্থ হয়ে যায়। জেনে রেখো! এটাই হচ্ছে কলব।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪১৭৮)

লেখক :  সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (সিসি), বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335