শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:২০ অপরাহ্ন
অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার সাথে তামিম ইকবালের সখ্য অন্য মাত্রার। কোনো ট্যুর বা হোম সিরিজে বেশিরভাগ সময় তাদের দুজনকে প্রায় একসাথেই দেখা যায়। আড্ডাও দেন একসঙ্গে।
পাঁচ দিন ছুটির পর রোববার আবার প্র্যাকটিস শুরুর দিনেও মাশরাফি-তামিম একসঙ্গে। দুপুরে টিম হোটেল ‘হায়াত রিজেন্সি’ থেকে একসাথে অধিনায়ক মাশরাফির সাথেই টিম বাসে উঠলেন তামিম। বোঝাই গেল, রুম থেকে একসঙ্গেই বেরিয়ে লিফটে নিচে নামা ও পরে লবি থেকে বের হওয়া।
এমনিতে যতো সু-সম্পর্কই থাকুক না কেন, ভারতের সাথে ম্যাচের আগে অনুজপ্রতিম তামিম ইকবালের সঙ্গে অগ্রজ মাশরাফির একটু বেশি মেলামেশাই যে স্বাভাবিক। কারণ তামিমই হতে পারেন মাশরাফির দলের প্রধান ব্যাটিং অস্ত্র।
ইতিহাস ও পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি রান তামিমের। বিশ্বকাপ তথা আইসিসির বিশ্ব আসরেও ভারতীয়দের বিপক্ষে তামিমের ব্যাটই সবচেয়ে সফল ।
একবার দুবার নয়, ২০০৭ সালে বিশ্বকাপে তামিম ইকবালের শুরুই ভারতের বিপক্ষে ৫৩ বলে ৫১ রানের আলো ঝলমলে ইনিংস দিয়ে। জহির খানের বলে দু পা সামনে বেরিয়ে সেই যে হাওয়ায় অনেক দূর ভাসিয়ে ছক্কা হাঁকানোর দৃশ্য-বেশ কিছুদিন বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপনও ছিল।
তারপর ২০১১ সালে দেশের মাটিতে বিশ্বকাপে ভারতীয়দের ৩৭০ রানের হিমালয়সমান স্কোরের জবাবেও বাংলাদেশের একজন ব্যটসম্যান স্বচ্ছন্দে খেলে হাফসেঞ্চুুরি উপহার দিয়েছিলেন, তিনি তামিম (৮৬ বলে ৭০)।
২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে ভারতের বিপক্ষে ১০৯ রানের হারে অবশ্য তামিম আর সেভাবে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি। ফিরে গিয়েছিলেন ২৫ রানে। কিন্তু এর মধ্যে বাংলাদেশ যে আরও তিনবার ভারতকে হারিয়েছে, তার প্রায় প্রতি ম্যাচে তামিমের ব্যাটে রান আছে।
২০১২ সালের এশিয়া কাপে ভারতের ২৮৯ রান টপকে ৫ উইকেটের অবিস্মরণীয় জয়ের মিশনে সাকিব ম্যাচসেরা হলেও শুরুতে ৯৯ বলে ৭০ রানের দায়িত্বপূর্ণ ইনিংস উপহার দিয়ে তামিমও বড় ভূমিকা রেখেছিলেন। এটাই শেষ নয়। ২০১৫ সালের জুনে দেশের মাটিতে তিন ম্যাচ সিরিজে ভারতের বিপক্ষে ২-১ ‘এ সিরিজ জয়ের মিশনেও তামিম ভালই অবদান রাখেন।
মোস্তাফিজুর রহমানের ক্যারিয়ারের সেরা দুই ম্যাচ জেতানো বোলিংয়ের ম্যাচের প্রথমটিতে বাংলাদেশ যে ৭৯ রানের জয় পায়, তাতে তামিম খেলেন ৬২ বলে ৬০ রানের এক সাহসী ও উদ্দীপক ইনিংস। তবে ৬ উইকেটের আরেক ঐতিহাসিক জয়ের ম্যাচে তামিমের ব্যাট কথা বলেনি। চট্টগ্রামের খান পরিবারের বর্তমান প্রজন্মর কনিষ্ঠ সদস্য ফিরে যান ১৩ রানে।
ইতিহাস জানাচ্ছে, ২০০৪ সালে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম জয়ের সময় তার জাতীয় দলে অভিষেকই ঘটেনি।
কিন্তু তারপর ২০০৭ ও ২০১১ সালে বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে বুক চিতিয়ে লড়াই করেছেন তামিম। দুবার তার ব্যাট থেকে বেরিয়ে এসেছে সাহসী অর্ধশতক।
২০১৫‘তে বড় ইনিংস খেলতে না পারলেও ২০১৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আবার জ্বলে ওঠেন তামিম। দল ৯ উইকেটে হারলেও তামিমের ৮২ বলে করা ৭০ রানের ইনিংসটিই আড়াইশো পার করে দেয় বাংলাদেশকে।
এরপর গত দুই বছরে বাংলাদেশ আরও দুবার ভারতের মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৮ সালে দুবাইতে এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে দুই ম্যাচের একটিতেও ছিলেন না তামিম।
এবারের বিশ্বকাপে প্রায় প্রতি খেলায় উইকেটের সাথে মানিয়ে নিয়েও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি তামিম। তার ব্যাট থেকে বড় ইনিংস বেরিয়ে আসেনি একটিও। ৬ ম্যাচে (১৬, ২৪, ১৯, ৪৮ , ৬২ ও ৩৬) একবার মাত্র পঞ্চাশের ঘরে পা রাখলেও বাকি পাঁচ ম্যাচে ২০ থেকে ৪০ ‘র ঘরে ঘরেই থেমে গেছেন তামিম।
তারপরও এ বাঁহাতি ওপেনারের ব্যাটের দিকেই তাকিয়ে বাংলাদেশ ভক্ত ও সমর্থকরা। শুরুতে তামিম একটি বড় ইনিংস খেলতে পারলে ব্যাটিংটা ভাল হবে-এমন বিশ্বাস অনেকেরই।
আর সবচেয়ে বড় সত্য হলো, ভারতের সাথে খেলা বলেই তামিমের ব্যাটের দিকে তাকিয়ে ভক্ত ও সমর্থকরা। কারণ ভারতের বিপক্ষে তার পরিসংখ্যান বরাবরই ভাল। ১৮ ম্যাচে ১৭ বার ব্যাট করে একবারের জন্য শতরানের দেখা না পেলেও সাত সাতটি ফিফটি আছে তার।
তবে ওই সাতবারের একবারও ৭০‘র প্রাচীর টপকানো সম্ভব হয়নি। কে জানে, এবারের বিশ্বকাপে এক ম্যাচেও লম্বা ইনিংস খেলতে না পারা এ বাঁহাতি ওপেনার ভারতের জন্যই সেঞ্চুরিটা জমা রেখেছেন কি না। ভারত যে তার প্রিয় প্রতিপক্ষ।