মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৪৫ অপরাহ্ন

কামান দাগালেও মের তুলনায় জুনে আক্রান্ত ১০ গুণ ডেঙ্গু রোগী

রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী নুসাইবা শনিবার স্কুল থেকে বাসায় ফিরেই মন খারাপ করে বসে রইলো। মেয়ের মলিন মুখ দেখে মা কারণ জিজ্ঞাসা করতেই নুসাইবা পাল্টা জিজ্ঞাসা করে আচ্ছা আম্মু, আমারও কি ডেঙ্গু জ্বর হবে?

এ প্রশ্ন কেন করছে জানতে চাইলে নুসাইবা জানায়, তার বেশ কয়েকজন সহপাঠী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত। এ কারণে কয়েকজন স্কুলের অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা দিতে পারছে না। কয়েকজন সিক রুমে পরীক্ষা দিচ্ছে। এ কারণে তার মন খারাপ।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে নুসাইবার মা বলেন, ডেঙ্গু আশঙ্কায় ছেলেমেয়েকে নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। ছেলেমেয়ে দুজনের একাধিক সহপাঠী, পরিচিত আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের অনেকেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন।

নুসাইবার মায়ের মতো রাজধানীর অনেক অভিভাবকই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোলরুম সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ চলছে। গত এপ্রিলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১৬১। জুনের ২৯ দিনেই সে সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ১৫৫৩ জনে দাঁড়িয়েছে। এ হিসাবে মে মাসের তুলনায় জুনে ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে প্রায় ১০ গুণ।

জানা গেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিকে মোট ১৮৩১ জন আক্রান্ত ও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৫২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ২৮৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। তাদের মধ্যে মিটফোর্ডে ২৪, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১৮, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ২২, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ২০, বারডেমে ৫, বিজিবি হাসপাতালে ২৯, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ২৩ ও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিকে মোট ১৪৭ রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

হাসপাতালে ভর্তি রোগী ছাড়াও বিভিন্ন চিকিৎসকের প্রাইভেট চেম্বারে প্রতিদিনই ডেঙ্গু কিংবা ডেঙ্গু আশঙ্কা নিয়ে জ্বরের রোগী আসছেন। সে হিসাবে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি হতে পারে বলে ডেঙ্গু বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করেন।

ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন জনসচেতনতামূলক কর্মসূচির পাশাপাশি মশক নিধনে কামান দাগানো ও ক্রাশ প্রোগ্রামসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করলেও তা খুব একটা কাজে আসছে না।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক রোগ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা বলেন, রাজধানীতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেও অবস্থা তেমন ভয়াবহ নয়। গত বছর ১০ হাজারেরও বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেও গত ছয় মাসে আক্রান্তের সংখ্যা দুই হাজারও ছাড়ায়নি। মারা গেছে দুজন; তবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে একজনেরও মৃত্যু কাম্য নয়।

তিনি বলেন, অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে এডিস মশার লার্ভা বেশি জন্মে। ডেঙ্গুতে সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকতে জনসচেতনতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335