শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৩৫ অপরাহ্ন

উত্তরায় উবার চালক হত্যার রহস্য এখনও উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ

রাজধানীর উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরে উবার চালক মো. আরমান (৪২) হত্যার একদিন পেরিয়ে গেলেও এখনও এই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। ছিনতাই নাকি পূর্ব শত্রুতার জেরে এই হত্যা সে বিষয়ে এখনও তারা পরিষ্কার হতে পারেনি। আরমানের সঙ্গে কারও কোনও শত্রুতা ছিল না বলে তার পরিবার দাবি করেছে। তাদের ধারণা, অপরাধীরা যাত্রী সেজে গাড়ি ছিনতাইয়ের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে তাকে হত্যা করতে পারে।
উত্তরা পশ্চিম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কী কারণে, কারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না। এই ঘটনায় একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন। সব বিষয় বিবেচনায় রেখে ঘটনার তদন্ত চলছে। শেষ হলে বিস্তারিত বলা যাবে।’
এর আগে, বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) রাত ২টায় রাজধানীর উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরের ১৬ নম্বর সড়কের ৫২ নম্বর বাড়ির সামনে একটি গাড়ির (ঢাকা মেট্রো- গ-২৫-৪৫৪৫) ভেতর থেকে উবার চালক (স্মার্টফোনে অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবা) আরমানের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। ওই রাতে রামপুরা থেকে যাত্রী নিয়ে উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরে এসেছিলেন তিনি।

 

আরমান পাবনা জেলার ঈশ্বরদী থানাধীন ফতে মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা। মিরপুর-১১ নম্বরের ১২ নম্বর সড়কের ৭ নম্বর লেনের ১৬ নম্বর বাড়িতে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ভাড়া থাকতেন তিনি।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানায়, ১৩ জুন রাত ১১টা ২১ মিনিটে উবারে কল পেয়ে রামপুরার ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে যাত্রী নিয়ে উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরে আসেন চালক আরমান। ১২টার পর ওই যাত্রীকে নামিয়ে দেওয়া হয়। ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
ঢামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আরমানের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছেন উত্তরা পশ্চিম থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহমেদ। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গাড়ির ভেতরে ড্রাইভিং সিটে নিহতের গলাকাটা মরদেহ পাওয়া যায়। তার বুকে ও পিঠে আঘাতের কোনও চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

গাড়ির মালিকের ছোট ভাই গোলাম আলী অন্তর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আরমান আমাদের ঘনিষ্ঠ। তার কোনও শত্রু নেই। দেড় বছর ধরে সে আমাদের গাড়ি চালায়। বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) রাতে গাড়ি জমা দিয়ে নারায়ণগঞ্জে ছোট বোনের বিয়েতে তার যাওয়ার কথা ছিল। আরমানের ফিরতে দেরি হওয়ায় আমি তার মোবাইলে কল করে জানতে পারি, কে বা কারা তাকে খুন করেছে। ’

 

শুক্রবার (১৪ জুন) সরেজমিনে উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরের ১৬ নম্বর সড়কে গিয়ে দেখা যায়, ৫২ নম্বর বাড়ির সামনে একটি দেয়ালে গাড়ির ধাক্কা লাগার চিহ্ন রয়েছে। ওই বাড়ির ১৫ গজ দূরে একটি স্পিড ব্রেকার রয়েছে। ১৬ নম্বর সড়কে কিছু কিছু জায়গাতে রক্তরে দাগ থাকতেও দেখা গেছে।
৫২ নম্বর ভবনের বাসিন্দারা বাংলা ট্রিবিউনকে জানায়, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে একটি শব্দ হয়। তখন তারা নিচে নেমে আসেন। তারা দেখতে পান একটি গাড়ি দেয়াল ঘেঁষে আছে। ভেতরে একজন লোক রক্তাক্ত। তার গলার অনেকটা অংশ কাটা ছিল। পরে তারা বিষয়টি পুলিশকে জানায়।
উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টর সোসাইটির পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মো. সাহিদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের সেক্টরের এই রোডটিতে কোনও সড়ক বাতি জ্বলে না। সিটি করপোরেশনকে বললে, কর্মকর্তারা গায়ে মাখে না। দুই-তিন দিন পর এসে মেরামত করলেও তা এক সপ্তাহ পর আবার নষ্ট হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সেক্টরের সিকিউরিটি নাইট গার্ড রয়েছে ৩৪ জন। কিছুটা সল্পতা রয়েছে। তা ছাড়াও ১৪ নম্বর সেক্টরে রাতে পুলিশ টহল কম দেয়। পুরো সেক্টরে যদি পুলিশ ঘন ঘন টহল দেয়, তবে অপরাধের সুযোগ থাকতো না।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, নিহতের গাড়ি স্টার্ট (চালু) অবস্থায় পাওয়া গেছে। তার সিট বেল্ট বাঁধা ছিল। রাত সাড়ে ১২টার দিকে চলন্ত অবস্থায় গাড়িটি ১৬ নম্বর সড়ক দিয়ে এস ৫২ নম্বর বাড়ির পাশের দেয়ালে ধাক্কা খায়। ওই গাড়ির ভেতর থেকে তার দুটি মোবাইল, মানিব্যাগসহ গাড়ির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাওয়া গেছে। এদিকে, গাড়ির পেছনের দুটি দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল এবং সামনের দুটি দরজার লক খোলা ছিল।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট এই কর্মকর্তা আরও জানান, উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরের ১৫, ১৬, ২০ নম্বর সড়কে বিভিন্ন ভবনে থাকা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। কয়েকটিতে এই গাড়ির সামনের অংশ দেখা গেলেও পেছনের অংশ দেখা যায়নি। এছাড়া, এসব ক্যামেরার ফুটেজে হামলার কোনও দৃশ্য দেখা যায়নি। তবে সবগুলো ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করা হবে।
ডিএমপি’র উত্তরা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) শচিন মৌলিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঘটনার কারণ জানতে আমরা বিভিন্ন ক্লু খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। হত্যাকারী কে বা কারা সেটি শনাক্তে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।’

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335