শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৩৯ অপরাহ্ন

ভারতের উড়িষ্যা ও অন্ধ্র প্রদেশে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় ‌‘তিতলি’

জিটিবি নিউজ ডেস্কঃ ভারতের উড়িষ্যা ও অন্ধ্র প্রদেশে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় ‌‘তিতলি’। বৃহস্পতিবার (১১অক্টোবর) ভোরে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ ও উড়িষ্যার মাঝামাঝি এলাকায় প্রচণ্ড শক্তিতে আছড়ে পড়েছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’। তিতলি ওড়িশার গোপালপুরে আছড়ে পড়ার সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল প্রতি ঘণ্টায় ১০২ কিলোমিটার। আর অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলামে গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সেখানে প্রবল জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে চলছে বৃষ্টি। বিভিন্ন জেলায় গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গেছে। অন্ধ্র আর ওড়িশায় ট্রেন ও বিমান চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। বহরামপুর ও গোপালপুরের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

টাইমস অব ইনডিয়া জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় তিতলির কারণে ওড়িশা রাজ্য সরকার ১৮টি জেলায় ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করেছে। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুই দিনের জন্য বনস্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তিতলি অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের রূপ পাওয়ায় বুধবারই উপকূলীয় এলাকা থেকে তিন লাখ লোককে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়।

ভারতের আবহাওয়া দপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, স্থলভাগে ওঠার পর মোটামুটি ঘণ্টায় ১৭ কিলোমিটার বেগে অগ্রসর হচ্ছে তিতলি। ঝড়টি আরও উত্তরপশ্চিম দিকে সরে গিয়ে কিছুটা বাঁক নিয়ে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের দিকে অগ্রসর হবে। সেই সঙ্গে ধীরে ধীরে কমতে থাকবে এর শক্তি।

আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শক্তি কমে এলেও বিস্তর বৃষ্টি ঝরাবে তিতলি। সেইসঙ্গে চলবে দমকা হাওয়া, যার জের চলবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকাতেও। ঘূর্ণিঝড় তিতলির প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় বুধবার থেকেই চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সঙ্কেত বহাল রেখেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

সেই সঙ্গে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সারাদেশে অভ্যন্তরীণ রুটে নৌ চলাচল বন্ধ রাখতে বলেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা, ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

তিতলির প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে বুধবার থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। বুধবার দিনের প্রায় পুরো সময় আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। তাপমাত্রাও গত কয়েক দিনের তুলনায় কমে এসেছে।

বৃহস্পতিবারের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়োহাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে আসতে পারে।

তিতলির আঘাতে গাছ উপড়ে পড়ে সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে। বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ছে। ট্রেন ও বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে হতাহাতের খবর এখনও জানা যায়নি।

উড়িষ্যার গোপালপুরে আছড়ে পড়ার সময় ঝড়ের গতি ছিল প্রতি ঘণ্টায় ১০২ কিলোমিটার। অন্ধ্র প্রদেশের শ্রীকাকুলামে এই গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৪০- ১৬০ কিলোমিটার। উড়িষ্যার উপকূলবর্তী পাঁচটি জেলা থেকে তিন লাখ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এছাড়া চার জেলায় স্কুল কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ভারী বৃষ্টিতে বন্যার আশঙ্কায় উড়িষ্যার প্রতিটি জেলায় সতর্কতা জারি করেছে প্রশাসন। মুখ্য সচিব এ পি পাধি জানিয়েছেন, দুর্যোগে একজনেরও যেন প্রাণহানি না হয়, তার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্য।

ঝড়ের নাম কেনতিতলি’?
এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগর তীরের আট দেশের আবহাওয়া দপ্তর ও বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্যানেলে ‘তিতলি’ নামটি প্রস্তাব করে পাকিস্তান। এর অর্থ প্রজাপতি। কিন্তু কেন এই নামকরণ করা হলো নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে অনেকের। গত কয়েকশো বছর ধরে আটলান্টিক মহাসাগর এলাকায় উৎপন্ন হওয়া ঝড়গুলোর নাম দিয়ে আসছে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের মানুষেরা। শুরুতে নিজেদের অঞ্চলের ঝড়গুলোকে বিভিন্ন নামে ডাকতো তারা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত এই পরিস্থিতি না বদলালেও ১৯৪৫ সাল থেকে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে শুরু হয় ঝড়ের আনুষ্ঠানিক নামকরণ। বিভিন্ন দেশের প্রস্তাবিত নামের তালিকা থেকে জাতিসংঘের সংস্থা বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) দায়িত্বপ্রাপ্ত প্যানেল নামকরণ চূড়ান্ত করে থাকে। পূর্বাভাস দেওয়াতে সুবিধা এবং সাধারণ মানুষের কাছে পূর্বাভাস ও সতর্কতা বোধগম্য করতেই ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয়ে থাকে।

বস্তুত ঝড়ের নামকরণের ক্ষেত্রে প্রত্যেক দেশের পাঠানো নামের তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে নামকরণ করা হয়। একেক অঞ্চলের ঝড়ের নাম চূড়ান্ত করার দায়িত্বটি ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হাতে ন্যস্ত থাকে। যেমন-উত্তর ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট ঝড়গুলোর নামকরণের দায়িত্ব ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের।

এক্ষেত্রে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আট দেশ বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ড থেকে আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের নাম প্রস্তাব করা হয়। প্রতিটি দেশের আটটি করে প্রস্তাবিত নাম নিয়ে ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরে বৈঠকের মাধ্যমে মোট ৬৪টি নামের তালিকা তৈরি হয়। আর সে তালিকা অনুযায়ীই পর্যায়ক্রমে ঝড়ের নামকরণ হয়।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্যানেলের সেই তালিকা অনুযায়ীই এবারের ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া হয়েছে ‘তিতলি’। এই তালিকায় থাকা পরের নামটিকে পরবর্তী ঘূর্ণিঝড়ের নাম হিসেবে ধরা হবে। ‘তিতলি’ নামটির প্রস্তাব এসেছে পাকিস্তানের কাছ থেকে। হিন্দি ভাষার শব্দ ‘তিতলি’ অর্থ ‘প্রজাপতি’। অর্থাৎ এবার পাকিস্তানের প্রস্তাবিত নামটিই ঝড়ের নাম হিসেবে নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ঝড়ের ক্ষেত্রে তালিকার পরের নামটি নেওয়া হবে। সেটি প্রস্তাব করেছে অন্য আরেকটি দেশ।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335